দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ৪ এপ্রিল: ভুলের কোন ছিদ্রপথ দিয়ে যে মানুষ নিজের মৃত্যু ডেকে আনে, তা সত্যিই বোঝা বড় দায়! ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা রামজীবনের ক্ষেত্রে যেমনটা হল সোমবার। বায়ুসেনার পরিত্যক্ত বোমা খুলতে গিয়ে বোমার বিস্ফোরণে মৃত্যু হল তাঁর! গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তাঁর স্ত্রী। আহত মেয়ে-জামাইও। সোমবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানার অন্তর্গত অঙ্গারনালী গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির নাম রামজীবন রানা। বিস্ফোরণের জেরে আহত হয়েছেন রামজীবনের স্ত্রী মালতি রানা, মেয়ে মেনকা রানা এবং জামাই সুরজিৎ রানা। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল তথা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে বলে জানা গেছে। তবে, মালতি ও মেনকার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জানা গেছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের যুদ্ধ বিমানগুলির বোমা ফেলার প্রশিক্ষণ হয় সংলগ্ন সাঁকরাইল থানার (ঝাড়গ্রাম জেলা) অন্তর্গত অঙ্গারনালী এলাকার নির্দিষ্ট একটি জঙ্গলে। ওই বোমা ফেলার জায়গাটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। তবে, বোমায় ব্যবহার করা কিছু ধাতুর খোঁজে দরিদ্র মানুষ রাতের অন্ধকারে জঙ্গলে গিয়ে পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে। সূত্রের খবর, রামজীবন বায়ুসেনার একটি পরিত্যক্ত এবং বিস্ফোরণ না হওয়া তাজা বোমা পেয়েছিল কোন মাধ্যম থেকে। রামজীবন পেশায় লোহা কাজ করেন। বোমা হাতে পেয়ে এদিন সকালে তিনি হাতুড়ি দিয়ে বোমা খোলার চেষ্টা করছিলেন। হঠাৎই সেই বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটে! ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রামজীবনের। বাড়িতে বোমা খোলার সময় রামজীবনের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী মালতি রানা, মেয়ে মেনকা রানা এবং জামাই সুরজিৎ রানা। বিস্ফোরণের জেরে তিনজনই আহত হয় এবং রামজীবনের বাড়িটিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

thebengalpost.net
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জামাই সুরজিৎ রানা :

বোমার শব্দ শুনে স্থানীয় গ্রামবাসীরা রামজীবনের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ভাঙ্গাগড় হাসপাতালে যায়। সেখানে রামজীবন-কে মৃত বলে ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আহত তিনজনকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রামজীবন এর স্ত্রী মালতি রানা ও মেয়ে মেনকা রানার অবস্থা আশঙ্কাজনক। রামজীবন জামাই সুরজিৎ রানা পায়ে চোট পেয়েছেন। এদিন, সুরজিৎ সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, “উনি এয়ারফোর্সের বোমা খোলার চেষ্টা করছিলেন ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে। সেই সময় ওটা ফেটে গিয়ে শ্বশুরমশাইয়ের মৃত্যু হয়। আমি, আমার স্ত্রী মেনকা এবং শাশুড়ি আহত হয়েছি। আমার বাড়ি খড়্গপুরের শালুয়া এলাকায়। আগামীকাল শীতলা পূজা রয়েছে বলে আমরা শ্বশুরবাড়ি এসেছিলাম।” কিন্তু, সুরজিৎ-ও সঠিকভাবে জানেন না যে, তাঁর শ্বশুরমশাই এয়ারফোর্সের বোমাটি ঠিক কোথায় এবং কিভাবে পেয়েছিলেন!

thebengalpost.net
কলাইকুন্ডা বায়ুসেনা ঘাঁটি (ফাইল চিত্র) :