দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২০ মার্চ: “সোনার খনি থেকে এখনও পর্যন্ত ১০ শতাংশ উদ্ধার করতে পেরেছি। আরও ৯০ শতাংশ বাকি!” সোমবার বিকেলে নিয়োগ দুর্নীতির মিডিলম্যান তথা প্রোমোটার অয়ন শীল-কে আদালতে পেশ করে বিচারকের উদ্দেশ্যে ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন ইডি (ED)’র আইনজীবী। এও জানিয়েছেন, “ভেবেছিলাম শুধু SSC আর TET এ দুর্নীতি হয়েছে। এখন দেখছি রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও বেনজির দুর্নীতি হয়েছে। ৬০ টি পুরসভায় (মিউনিসিপাল কর্পোরেশন) শিক্ষক, টাইপিস্ট থেকে শ্রমিক নিয়োগেও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।” ইডি আইনজীবীর সংযোজন, “যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তাতে একমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণই এই বাংলাকে বাঁচাতে পারবেন।”
উল্লেখ্য যে, প্রায় ৩৭ ঘন্টা ধরে সল্টলেকের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানোর পর অয়ন শীলকে গ্রেফতার করে ইডি (ED)। ইডি সূত্রের দাবি, এই অয়ন শীলের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ব্যাঙ্কের লেনদেনের নথি। এখানেই শেষ নয়, জানা গিয়েছে, শান্তনু এবং অয়নের মধ্যেও কোটি কোটি টাকার লেনদেন হতো। তার মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে ওই দু’জনের অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তাঁর বাড়ি (ফ্ল্যাট) থেকে প্রায় ৫০০০ চাকরির প্রার্থীর তালিকা পাওয়া গেছে বলেও ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ২০১২ প্রাইমারি টেটের নথি (অ্যাডমিট, সুপারিশের তালিকা) থেকে শুরু করে মিউনিসিপাল কর্পোরেশন নিয়োগের ওএমআর (OMR) উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষের মিডিলম্যান হিসেবে এই অয়ন কাজ করতেন বলে প্রাথমিকভাবে ইডি’র তদন্তে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, অয়ন শীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তিনজন প্রোমোটারের নামও পেয়েছে ইডি। জানা গিয়েছে, চাকরি বিক্রির টাকা সেই প্রোমোটারদের মাধ্যমে প্রোমোটিংয়েও বিনিয়োগ করতেন শান্তনু। ওই তিন প্রোমোটারকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার তোড়জোড় করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। ইতিমধ্যে, অয়নকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছে ইডি। বিভিন্ন জনের মুখোমুখি বসিয়ে তাঁকে জেরা করা হবে বলে ইডি আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন।
এদিকে, অয়ন শীলের প্রতিবেশীর দাবি, সন্ধ্যার পরই অয়নের অফিসে বেশি আসতেন ছেলে-মেয়েরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা আসতেন মোটরবাইকে। এলাকার মানুষ জানতেন, ওইখানে কম্পিউটার শেখান অয়ন। অয়নও তেমনটাই জানিয়েছিলেন প্রতিবেশীদের। কিন্তু, এতদিন ধরে যে এই জায়গাটা দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে, তা ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাননি! তবে, তাঁদের এও দাবি অয়নের বাবা সদানন্দ শীল ও মা অমিতা শীল নিতান্তই ভালোমানুষ। বাবা সদানন্দ শীল একসময় বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। বর্তমানে তাঁর প্রায় ৮০ বছর বয়স। এই বয়সেও তিনি গৃহ শিক্ষকতা করেন বলে প্রতিবেশীরা দাবি করেছেন। একজন সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় তাঁর পরিচিতি। অয়নের এক প্রতিবেশিনী জানান, “জেঠু জেঠিমার মতো ভালো মানুষ হয় না। দাদা (অয়ন)-কেও ভালো বলেই জানতাম। ভেবেছিলাম প্রোমোটারি ব্যবসা করে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। তার আড়ালে যে এসব করতেন, আমরা জানবো কি করে বলুন!” উল্লেখ্য যে, হুগলির চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ার বাসিন্দা অয়ন শীল। কিছু দিন আগে চুঁচুড়া ছেড়ে অয়ন চলে যান সল্টলেকের ফ্ল্যাটে। অপরদিকে, ছেলের পড়াশোনার জন্য তাঁর স্ত্রী থাকেন দিল্লিতে। তবে জগুদাসপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁদের। এদিকে, প্রতিবেশীদের মধ্যে একটি অংশ ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছেন, অয়নকে চাকরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে একজন এজেন্ট এবং তাঁর ছেলে নাকি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে, নিয়োগ দুর্নীতিতে এই মুহূর্তে সবথেকে বড় চমক ‘সোনার খনি’ অয়নের রহস্যভেদ!