দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১০ আগস্ট: ইডি (ED)’র পর এবার খেলা শুরু করলো সিবিআই (CBI)। গ্রেফতার দুই SSC (স্কুল সার্ভিস কমিশন) শীর্ষ কর্তা- শান্তি প্রসাদ সিনহা এবং অশোক সাহা। একজন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সরাসরি হস্তক্ষেপে তৈরি স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ সংক্রান্ত সর্বোচ্চ কমিটির প্রধান এবং অপরজন স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন সচিব। আর, এই দু’জনের গ্রেফতারির ফলে তাঁদের আমলে (২০১৮-২০২১) হওয়া স্কুল সার্ভিস কমিশনের পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই তদন্তের মুখে পড়ল! তা সে এসএসসির নবম থেকে দ্বাদশ হোক, কিংবা গ্রুপ সি-ডি বা আপার প্রাইমারি (উচ্চ প্রাথমিক)! জানা গিয়েছে, এদিন তাঁদের বাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার বিকেলে তাঁদের গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এঁদের তো প্রত্যেকেরই গ্রেফতার হওয়া উচিত। এরা পরিকল্পনা করে টাকা তুলেছেন। আরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের গ্রেফতার হওয়া উচিত। সেটা যত দ্রুত হয়, তত তদন্তের কাজে সুবিধা হবে। এ এক গভীর চক্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। এদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে চরমতম শাস্তি হওয়া উচিত।”

প্রসঙ্গত, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক শান্তি প্রসাদ সিনহা এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন সচিব (সেক্রেটারি) অশোক সাহাকে বুধবার বিকেলে এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার করে সিবিআই। উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এই প্রথম গ্রেফতারি। শান্তি প্রসাদ সিনহা ছিলেন এসএসসি’র উপদেষ্টা কমিটির শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে এর আগেই শান্তি প্রসাদ সিনহার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাগ কমিটি। অতীতে ইডি এবং সিবিআই – দুই তদন্তকারী সংস্থাই শান্তি প্রসাদ সিনহার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল। তাদের আয়-ব্যয়ের হিসেব থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন নথি হাতে এসেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের হাতে। সেই সূত্র থেকেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ জাগে এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক শান্তি প্রসাদ সিনহার একটি বড় ভূমিকা ছিল নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে। তবে, ইডি’র পর সবেমাত্র খেলা শুরু করলো সিবিআই- এটাই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। এখনো অনেক গ্রেফতারি বাকি বলে তাঁদের মত! লাইনে আছেন, অপসারিত প্রাইমারি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট মানিক ভট্টাচার্য, যাকে আগামী সপ্তাহে ফের তলব করেছে ইডি। আছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক সুকান্ত ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গাঙ্গুলি, প্রাক্তন স্কুল সার্ভিস কমিশন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার প্রমুখরাও।

thebengalpost.net
শান্তি প্রসাদ সিনহা:

অন্যদিকে, সারা রাজ্য জুড়ে,‌ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ১০০’র বেশি চাকরির দালাল বা এজেন্টের খোঁজে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টর (ED- Enforcement Directorate)। তদন্ত করতে গিয়ে ইডি দেখেছে, এই দালালরাই ‘অযোগ্য’ চাকরিপ্রার্থীদের খুঁজে নিয়ে আসতেন। ডিল হত ১০ থেকে ১৫-২০ লক্ষ টাকায়। তারপর, ডিল ফাইনাল হলে তাদের ফর্মে বিশেষ চিহ্ন করে দেওয়া হতো। তারপর, তাদের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র খুঁজে বের করে তা ফিলাপ করে পুনরায় স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। আর, এই পুরো প্রক্রিয়াটাই হত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে। সরাসরি জড়িত ছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং বিকাশ ভবনের কিছু শীর্ষ কর্তা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গ্রেফতার হওয়া এই অশোক সাহা। এছাড়াও ছিলেন, প্রাক্তন এসএসসি চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার থেকে শুরু করে অপসারিত প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যরা। প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতা বা তদারকিতে থাকতেন প্রাক্তন মন্ত্রীর দুই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। তাঁরাই বি এড, ডিএলএড কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গা থেকে দালালদের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতেন। ইডি খোঁজ চালাচ্ছে ওই দুই মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ থেকে শুরু করে রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১০০ দালালের। আইনজীবীদের একটি সূত্রে জানা গেছে, এই দালালদের অধিকাংশই নাকি একসময় সারদা বা রোজভ্যালির এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।‌ পরবর্তী সময়ে, রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি বা কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনে এঁদের কাজে লাগানো হয়েছিল!

thebengalpost.net
গ্রেফতার করল সিবিআই: