দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৩ জুলাই: ঠিক এক বছর আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন হুগলির বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ থেকে শুরু করে তাপস মন্ডল-রাও। তারপরেও, তদন্ত কেন ঢিমে তালে? অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এখনো গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি কেন? জেলায় জেলায় থাকা মিডিলম্যান বা মধ্যস্থতাকারী (‘দালাল)- দেরই বা কবে গ্রেফতার করা হবে? সর্বোপরি, এই তদন্ত শেষ হবে কবে? সম্প্রতি, সিবিআই আদালতের বিচারক এবং কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা-র তরফে এই সমস্ত প্রশ্নগুলিই ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে সিবিআই (CBI)- এর আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে। পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতেও বিচারপতিদের কড়া ভর্ৎসনার মুখে বারবার পড়তে হয়েছে সিবিআই এবং ইডি-কে। এমনকি, গ্রেপ্তার হওয়া বিধায়ক, মন্ত্রী ও আধিকারিকদের আইনজীবীরাও আদালতে অভিযোগ এনেছেন, বিনা বিচারে তাঁদের মক্কেলদের আটকে রাখা হয়েছে! কবে শেষ হবে তদন্ত? শেষ পর্যন্ত, প্রাক্তন মন্ত্রীর গ্রেফতারির প্রায় এক বছরের মাথায় তৎপরতা লক্ষ্য করা গেল সিবিআইয়ের মধ্যে। এবার, সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হল টেট ফেল করেও প্রাথমিকে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের। বৃহস্পতিবার থেকেই এই কাজ শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

thebengalpost.net
CBI দপ্তর:

সিবিআই সূত্রে জানা যায়, রাজ্যের সমস্ত জেলা থেকে ২০১৪-র টেট-অনুত্তীর্ণ (TET Failed) অথচ চাকরি করছেন এমন শিক্ষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এবার, সেই সমস্ত শিক্ষকদের বয়ান রেকর্ড শুরু করেছে সিবিআই (CBI)। সূত্রের খবর, গত দু’দিনে চার জেলার একাধিক শিক্ষকের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। টেট পাস না করেও কীভাবে চাকরি পেলেন? তা জানতেই সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলা যেমন কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের শিক্ষকদের বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর, অন্যান্য জেলার শিক্ষকদের বয়ানও রেকর্ড করা হতে পারে। দু’দিনে চার জেলার অন্তত ৩০-৪০ জন শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তাঁরা কিভাবে চাকরি পেয়েছেন তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে দাবি, তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিছু শিক্ষক দাবি করেছেন, সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে। আবার, কিছুজন বলেছেন জেলার মধ্যস্থতাকারী-র মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল যোগাযোগ। টেট-অনুত্তীর্ণ শিক্ষকদের একাংশকে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্ফোরক তথ্য মিলেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। এক্ষেত্রে, এই শিক্ষকদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন ‘মিডলম্যান’ (বা, দালালের) এর হাত ছিল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেই বিষয়টিও। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে TET বিজ্ঞপ্তির উপর ভিত্তি করে ২০১৬-‘১৭ সালে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের নিয়োগ নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে। এই মুহূর্তে, একাধিক মামলা বিচারাধীন কলকাতা হাইকোর্টে এবং সুপ্রিম কোর্টে। আবার, সুপ্রিম কোর্ট থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা পুনরায় ফিরে এসেছে কলকাতা হাইকোর্টে। ২৬৯ জন শিক্ষকদের একটি মামলা বিচারাধীন সুপ্রিম কোর্টে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অমৃত সিনহার বেঞ্চেও একাধিক মামলা বিচারাধীন। সবমিলিয়ে, বেশ চাপে সিবিআই। তাই, এবার তাঁরা জেলায় জেলায় মিডিলম্যানদের গ্রেফতারির পথে হাঁটতে চলেছে বলে সূত্রের খবর!