দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৭ এপ্রিল: শেষমেশ গত ৩ দিন ধরে চলা ‘জীবন-নাট্যের’ অবসান! আরও একটি উইকেট পড়লো শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। তাঁদের আরও এক বিধায়ক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলের পথে! এদিকে, টানা ৬৮ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হল মুর্শিদাবাদের বড়ঞা’র বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা’র নিজের মোবাইল-টিও। পুকুর নয়, পুকুরপাড়ে থাকা খেজুর গাছের তলা থেকে মোবাইলটি খুঁজে পান এই কাজের দায়িত্বে থাকা সঞ্জীব বাগদি নামে এক শ্রমিক। রীতিমতো সিল করা বা সিজ করা অবস্থায় এবং সম্পূর্ণ অক্ষত রূপে মোবাইলটি সিবিআই এর হাতে এসেছে! প্রশ্ন এখন একটাই, এই মোবাইলে লুকিয়ে কার কার ‘জীবন’? উল্লেখ্য যে, আগের মোবাইলটি তাঁর স্ত্রী টগরি সাহা’র বলে জানা গেছে। যদিও, প্রায় ৩২ ঘন্টা কাদা জলের নিচে থাকায়, সেটি থেকে আদৌ কোন ডেটা উদ্ধার সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা। অবশ্য, জীবনের নিজের ‘জীবন’ স্বরূপ মোবাইলটি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় বেশ আশাবাদী তদন্তকারী দল। তাতে অনেক ‘গুপ্তধন’ লুকিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। ইতিমধ্যে, জীবনকৃষ্ণ সাহার শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই। অন্তত, ৪ দিনের হেফাজতে চাওয়া হবে তাঁকে। এমনটাই জানা যাচ্ছে সিবিআই সূত্রে।

thebengalpost.net
জীবন কৃষ্ণ সাহা গ্রেফতার:

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১২-টা থেকে শুরু হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদ। সিজ বা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা’র দুটি মোবাইল ফোনও। এরপরই, শৌচাগার যাওয়ার নাম করে সিবিআই (CBI)- এর বাজেয়াপ্ত করা মোবাইল দু’টি গোপনে নিয়ে দৌড় দেন জীবন। জেলখানার মতো উঁচু প্রাচীরে উঠে সেখান থেকে পুকুরের দিকে ছুঁড়ে দেন মোবাইল দু’টি। এরপর, শুক্রবার বিকেল ৪টা-সাড়ে ৪টা থেকে টানা তল্লাশি শুরু করে সিবিআই। জল সেঁচা বা ছেঁচা হয়। প্রায় ৩২ ঘন্টা পর, রবিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ উদ্ধার হয় একটি মোবাইল। প্রায় ৬৮ ঘন্টা পর, সোমবার বেলা সাড়ে ১২-টা নাগাদ উদ্ধার হয় তাঁর দ্বিতীয় মোবাইলটি। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পুকুর পাড়ের কাছে খেজুর গাছের নীচ থেকে মেলে ফোনটি। পুকুর থেকে মোবাইল উদ্ধারের কাজ যাঁরা করছিলেন, তাঁদের মধ্যে সঞ্জীব বাগদি নামে এক ব্যক্তি সেটি উদ্ধার করেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় কালো রঙের ওই মোবাইলটি উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়ার সময় সেটি সাদা প্লাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া ছিল। প্যাকেটের উপরে রয়েছে সিজ়ার লিস্ট নম্বর। যার অর্থ, ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার আগে এই মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করেছিল সিবিআই।

অন্যদিকে, সিবিআই সূত্রে খবর, বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ একাই ৩০০-৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে যে সমস্ত নথি উদ্ধার করা হয়েছে, তা থেকে অন্তত পাঁচটি জেলার চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা পাওয়া গিয়েছে। এই পাঁচটি জেলা হল — মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং দুই দিনাজপুর। এর আগে, হুগলিতে নিয়োগ দুর্নীতির দালাল হিসাবে তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানতে পেরেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের এজেন্ট কৌশিক ঘোষকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার, তাঁদের ‘মাথা’ হিসেবে জীবনকৃষ্ণ-কেও গ্রেফতার করা হল। সিবিআই এবং ইডি’র তরফে এবার জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হবে, জীবনের মাথায় কে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০০৪ সালে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি পান জীবনকৃষ্ণ। ২০১২-‘১৩ সালে অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জীবনকৃষ্ণ। তারপর থেকেই বদলে যেতে থাকে জীবন! গরু পাচার থেকে নিয়োগ দুর্নীতিতে হাত পাকাতে থাকেন অনুব্রত-পার্থ’দের অনুপ্রেরণায়। ২০২১ সালে বড়ঞা বিধানসভা থেকে দাঁড়িয়ে বিধায়কও হন! অভিযোগ, জীবনের হাত ধরে নবম-দশম একাদশ-দ্বাদশ থেকে শুরু করে প্রাথমিক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে প্রায় ৮ হাজার চাকরিপ্রার্থী বেআইনিভাবে এবং টাকার বিনিময়ে নিয়োগপত্র পেয়েছেন! জীবনের বাড়ি থেকে মিলেছে উচ্চ প্রাথমিকের কাগজপত্রও। সবমিলিয়ে, নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জীবন একাই প্রায় ৩০০-৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে সিবিআই সূত্রে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার ভোর ৪টা ৫০ নাগাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। আজ আলিপুর আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া সমস্ত তথ্য-প্রমাণ পেশ করে, হেফাজতে চাইবে সিবিআই। (আপডেট: আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ ৪ দিনের জন্য জীবনকৃষ্ণ সাহা’র সিবিআই হেফাজত মঞ্জুর করেছেন বিচারক।)

thebengalpost.net
পুকুর পাড়ে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার জীবনের মোবাইল: