দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১২ অক্টোবর: সুপ্রিম কোর্টেও বড় ধাক্কা খেলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য! ইডি’র হাতে গ্রেপ্তারি নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করলোনা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু’র বেঞ্চ। তাই, আপাতত ইডি হেফাজতেই (২৫ অক্টোবর অবধি) থাকতে হচ্ছে ‘মেধা’র নামে ‘চাকরি বিক্রি’ করায় অভিযুক্ত মানিক-কে! আগামী শুক্রবার পরবর্তী শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে। মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবী-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ইডি’কে নোটিশ দেওয়ার জন্য। সেক্ষেত্রে ইডি’র আইনজীবীও মামলার পার্টি হিসেবে যুক্ত হবেন এবং ইডি’র বক্তব্য তুলে ধরবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর মক্কেলকে (মানিক ভট্টাচার্য-কে) সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ইডি গ্রেপ্তার করেছে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন মানিকের আইনজীবী। এর আগে, সিবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তারিতে সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ দিয়ে রাখলেও, ইডির গ্রেপ্তারি নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপ এদিন করেনি সুপ্রিম কোর্ট।

thebengalpost.net
আপাতত ইডি হেফাজতেই মানিক :

অন্যদিকে, মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করার ভুরি ভুরি প্রমাণ ইতিমধ্যেই ইডি আধিকারিকদের হাতে এসে পৌঁছেছে। মানিকের একটি কম্পিউটারের ক্লাউড ফোল্ডারে লোড করে রাখা ডিজিটাল নথি থেকে ইডি আধিকারিকরা দুর্নীতির একাধিক প্রমাণ পেয়েছেন। নকল মেধাতালিকা সহ নানা তথ্য পাওয়া গেছে। অপরদিকে, একটি সিডিতে ৬১ জন টেট প্রার্থীর নাম ও রোল নম্বর রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্যানেল দেখে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই ৬১ জনের মধ্যে ৫৫ জনই নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের যে টাকার বিনিময়েই চাকরি দেওয়া হয়েছে তা একপ্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা। অন্যদিকে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা একটি অভিযোগপত্র-ও পাওয়া গেছে মানিক ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে। সেই অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ৪৪ জন টেট প্রার্থীকে ৭ লক্ষ টাকার (প্রতি প্রার্থী হিসেবে) বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৮ লক্ষ টাকার দুর্নীতি! ইডির আইনজীবী আরও অভিযোগ, ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা মানিকের ছেলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হদিস মিলেছে। ৫১৪ ইনস্টিটিউট প্রতিটা কলেজ (বিএড ও ডিএলএড ) ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও সার্ভিস প্রভাইড জন্য মানিকের ছেলেকে। মানিকের ছেলের নামে বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে ওই কলেজগুলি চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু, কোটি কোটি টাকা দিলেও কোনো সার্ভিস প্রভাইড করেননি। এটি একটি ড্রামি ট্রানসাকশান। ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ভেরিফাই করে দেখা গিয়েছে এই কোটি কোটি টাকা মানিকের ছেলের অ্যাকাউন্টে রয়েছে! এছাড়াও, অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে মানিকের ভুরি ভুরি জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে বলেও জানা গেছে।

অন্যদিকে, মানিক ভট্টাচার্যের আমলে অর্থাৎ ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রাথমিকে মোট ৭৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ২০১২’র টেট থেকে ২০১৪ সালে ১৭,৫০০; ২০১৪ টেট থেকে দু’দফায় যথাক্রমে ২০১৬ সালে প্রায় ৪২ হাজার এবং ২০২১ সালে প্রায় ১৩ হাজার (বর্তমান পর্ষদ সভাপতির হিসেবে ১৩,৫৬৪) শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এই ৭৩ হাজার শিক্ষকই এখন ইডি-সিবিআই (ED-CBI)- এর আতস কাঁচের তলায়। তদন্তকারীদের হিসেবে, কয়েক হাজার শিক্ষকের চাকরি হয়েছে সাদা খাতা (Blank OMR) জমা দিয়ে, টেট ও ইন্টারভিউয়ের নম্বর বাড়িয়ে এবং লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। এখন দেখার এই সংখ্যাটা কত! যদিও, ওএমআর নষ্ট করা সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে তদন্তকারীরা কিভাবে ‘চিচিং ফাঁক’ করে, সেদিকেই তাকিয়ে হাজার হাজার বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা!

thebengalpost.net
‘মানিক বধ’ চাকরিপ্রার্থীদের হাতে:

thebengalpost.net
সুপ্রিম কোর্টও দিলোনা রক্ষাকবচ: