দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১১ অক্টোবর: অবশেষে গ্রেফতার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির ‘কিংপিন’ তথা ‘মেধা তত্ত্বের জনক’ মানিক ভট্টাচার্য! সোমবার রাতভর ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করলো ইডি (Enforcement Directorate)। সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সিবিআই মামলায় তাঁকে ‘রক্ষাকবচ’ দিয়ে জানিয়েছিল, “মামলার রায় ঘোষণা অবধি গ্রেপ্তার করা যাবেনা মানিক ভট্টাচার্যকে। তবে, তদন্ত চলবে। মানিক ভট্টাচার্যকেও তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে।” সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু’র বেঞ্চ রায় ঘোষণা করার আগেই অবশ্য মানিক ভট্টাচার্য-কে গ্রেপ্তার করলো ইডি। ঘড়ির কাঁটায় মঙ্গলবার রাত্রি ১টায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজই (মঙ্গলবার) তাঁকে আদালতে পেশ করে, নিজেদের হেফাজতে চাইবেন ইডি আধিকারিকরা।
এদিকে, মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে ইডি’র মত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল সিবিআই গ্রেপ্তার করতে পারবেনা। ইডি’কে বাধা দেওয়া হয়নি! তদন্তে অসহযোগিতা, ভুয়ো তথ্য প্রদান প্রভৃতি একাধিক কারণে মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলায় ইডি যে চার্জশিট দিয়েছিল, তাতেও মানিকের নাম ছিল। চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন মানিক। নদীয়ার চেয়ারম্যানকে হুমকি দিয়েছিলেন, ওএমআর নষ্ট করেছিলেন, ইন্টারভিউ’র নম্বর বদল করেছিলেন। এছাড়াও, ডিএলএড কলেজের মালিকদের কাছ থেকেও নানাভাবে টাকা তুলতেন! সেই সমস্ত খবর ছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। কিন্তু, পার্থ এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ইডি সূত্রে খবর, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের মোবাইল বার্তা আদানপ্রদানের প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে। চার্জশিটেও এর উল্লেখ রয়েছে। এদিকে, চার্জশিট জমা দেওয়ার পর মানিককে তলব না করা সত্ত্বেও, ২১ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি নিজেই ইডি আধিকারিকদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন নথি জমা দিয়ে আসেন! সেই নথি ধরেই তদন্ত চলছিল। কিন্তু, সেই সমস্ত নথিতে একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েই সোমবার রাতভর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়! অবশেষে তদন্তে অসহযোগিতা করার অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়।
এদিকে, মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “মানিক মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তদন্ত এড়াতে। তদন্তে সহযোগিতা করেননি। ইডি হেফাজতে নিয়ে ভাল করেছে। এঁদের হেফাজতে নিয়েই তদন্ত করা দরকার। আশা করা যায়, এর পর আরও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।” উল্লেখ্য যে, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পর ধীরে ধীরে এস এস সি দুর্নীতি কাণ্ডে এস.পি সিনহা, অশোক কুমার সাহা, কল্যাণময় গাঙ্গুলি, সুবীরেশ ভট্টাচার্য-কে গ্রেপ্তার করা হলেও, প্রাথমিক দুর্নীতি কাণ্ডে অপসারিত পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য-কে গ্রেপ্তার করতে কালঘাম ছুটছিল সিবিআই-এর। আইন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ জারি করলেও তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি সিবিআই! উল্টে সুপ্রিম কোর্ট থেকে সাময়িক ‘রক্ষাকবচ’ জোগাড় করেছিলেন ‘ধুরন্ধর’ মানিক ভট্টাচার্য। তবে, শেষ পর্যন্ত ইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করল ১১ অক্টোবর রাতে। আর, এই ঘটনাতেই খুশির হাওয়া বঞ্চিত ও আন্দোলনকারী প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে!