thebengalpost.net
ছবি- প্রতীকী ও সংগৃহীত

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২২ নভেম্বর: রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ‘বেনজির’ ঘটনা! স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করবে সিবিআই (CBI) বা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন। সোমবার বিকেলে এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন রাজ্যের শিক্ষিত সমাজ! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের শিক্ষা সংক্রান্ত সিঙ্গেল বেঞ্চে, রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে বেআইনিভাবে গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগের মামলার চূড়ান্ত শুনানি ছিল। এই শুনানি শেষে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-ডি পদের কর্মী নিয়োগ মামলায় “সিবিআই তদন্ত ছাড়া কোনও উপায় নেই” বলে জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। স্কুল সার্ভিস কমিশন আদালতে অনুরোধ করে, সিবিআই ছাড়া রাজ্যের যে কোনও তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো হোক। সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে এসএসসি-র হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কিশোর দত্ত। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একাধিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। তা শুনে বিচারপতি মন্তব্য করেন, “আপনার যা বলার আছে তার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দেব। কেন বুঝতে চাইছেন না আপনারা মামলায় হেরে গিয়েছেন। আপনাদের হলফনামা থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে নিয়ম মেনে নিয়োগ হয়নি। আমি এর তদন্তের জন্য সিবিআই ঠিক করে নিয়েছি।” এর পরই তিনি বলেন, “যেহেতু এই নিয়োগের সঙ্গে রাজ্য জড়িয়ে আছে, তাই রাজ্যের কোন সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো যাবে না!”

thebengalpost.net
ছবি- প্রতীকী ও সংগৃহীত

আদালত আরও জানিয়েছে, সিবিআই-কে একটি তদন্তকারী দল গঠন করতে হবে। ওই দলের মাথায় একজন জয়েন্ট ডিরেক্টর এবং ডিআইজি বা এসপি মর্যাদার কোনও অফিসার থাকবেন। শুধু তাই নয়, দলে থাকা কোনও অফিসার তদন্ত চলাকালীন বেরিয়ে যেতে পারবেন না! তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। এদিনের শুনানি পর্বে শিক্ষাসংক্রান্ত বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করে বলেন, “দুষ্কৃতীর কোনও রাজনৈতিক দল হয় না, তারা দুষ্কৃতীই হয়। দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দলের আশ্রয় নেয়।” আর, সেই দুষ্কৃতীকে খুঁজে বের করাই আদালতের লক্ষ্য বলে তিনি স্পষ্ট করে দেন। এর পরই রাজ্যের হয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনুরোধ করছি সিবিআই দেবেন না। রাজ্যের পুলিশের উপর এক বার ভরসা করা হোক। রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ নেই যে, তারা যথাযথ তদন্ত করেনি। সিবিআই তদন্ত একটা সময় গিয়ে থমকে যায়।” তিনি আরও বলেন, “যে কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি দিয়ে তদন্ত করালেও অসুবিধা নেই।” পুলিশি তদন্ত নিয়ে রাজ্য হলফনামা জমা দিতে চায় বলেও আদালতে জানিয়েছেন এজি। তবে, অ্যাডভোকেট জেনারেল কিংবা স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী কিশোর দত্তের এইসব সওয়ালে মন গলেনি বিচারপতির! তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তথা সিবিআই’কে দিয়েই স্কুলে নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগের তদন্তের নির্দেশ দেন।

thebengalpost.net
স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন পদক্ষেপ আদালতের :

এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, কলকাতা হাইকোর্টে এদিনও শুনানি পর্বে ‘নিয়োগপত্র’ দেওয়া নিয়ে, বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অধীন স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাঁদের দুই আইনজীবী, পরস্পর দুই সংস্থা-কে দোষারোপ করতে থাকেন! উল্লেখ্য যে, ২০১৯ এ গ্রুপ ডি প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বা নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রায় হাজারখানেক (কিংবা, তার থেকেও বেশি) প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে। প্রায় ৫০০ জন ‘অবৈধ’ চাকরিপ্রার্থীর তথ্য ইতিমধ্যে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে পেশ করেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর দাবি, এই ধরনের প্রার্থী আরও অনেক আছে। এদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশন হলফনামায় স্বীকার করে নেয়, কোথাও একটা গলদ আছে! তবে, এই নিয়োগের সুপারিশ তারা করেনি। আদালত প্রশ্ন তোলে, স্কুল সার্ভিস কমিশন সুপারিশ না করলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগপত্র দিল কি করে! একই বক্তব্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদেরও। এরপরই, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সমস্ত জারিজুরি শেষ হয়ে যায়! বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্নীতিতে ভরা এই নিয়োগের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যা রাজ্যের শিক্ষা জগতে এক ‘বেনজির’ ঘটনা হিসেবেই ইতিহাসে স্থান পেল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল!

thebengalpost.net
কলকাতা হাইকোর্ট :