দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর: রেলশহর খড়্গপুরের বুকে ফের চাঞ্চল্যকর ঘটনা! রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখার একটি দল টাউন থানার সদ্য প্রাক্তন আই.সি (ইন্সপেক্টর ইনচার্জ) রাজা মুখার্জি’র বাড়িতে হানা দিল। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখা বা অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ (Anti Corruption Branch) এর চার সদস্যের একটি দল বুধবার বিকেল নাগাদ খড়্গপুর শহরের প্রেমবাজার সোসাইটিতে অবস্থিত একটি বাড়িতে হানা দেয়। নেতৃত্বে ছিলেন পি. বাসু নামে এক ইন্সপেক্টর। ছিলেন এক মহিলা সাব ইন্সপেক্টর সহ আরও ৩ জন। উল্লেখ্য যে, ওই বাড়িতেই ভাড়া থাকে খড়্গপুর টাউন থানার প্রাক্তন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ রাজা মুখার্জি’র পরিবার। বুধবার বিকেল থেকে রাত অবধি ওই বাড়িতে চলে তল্লাশি! তবে, এই তল্লাশি নিয়ে তদন্তকারী দল সহ জেলার পুলিশ আধিকারিকরা মুখে কুলুপ আঁটলেও, বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী রাজার বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগ পেয়েই তাঁর বাড়িতে হানা দেয় দুর্নীতি দমন শাখার তদন্তকারী দল। রাত্রি নাগাদ ওই তদন্তকারী দল বেরিয়ে যাওয়ার সময়, সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন! তবে, ক্যামেরার সামনে কিছু না বলেই গাড়িতে উঠে যান তাঁরা। সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাজার বাড়ি থেকে প্রায় ২২ লক্ষ টাকার সোনা এবং নগদ ৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে! যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চায়নি কোনও পক্ষই। ফোনে পাওয়া যায়নি রাজা-কেও!
প্রসঙ্গত, একসময়ের শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ এই পুলিশ অফিসার দীর্ঘদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি হাওড়া জেলায় কিছুদিন কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে খড়্গপুর সদরের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে হাওড়া থেকে রাজা-কে বদলি করে আনা হয় খড়্গপুর টাউন থানায়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, খড়্গপুর সদর বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার-কে জেতানোর দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু-ই। সে যাত্রায় শুভেন্দুর কাঁধে ভর করে প্রদীপ হারিয়ে দেন বিজেপির প্রেমচাঁদ ঝা-কে। এদিকে, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে, ২০২০-এর ১৯ ডিসেম্বর অমিত শাহের হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেন শুভেন্দু। অন্যদিকে, খড়্গপুর সদর বিধানসভাতেও ভরাডুবি হয় প্রদীপের! ব্যবধান স্বল্প হলেও, নবাগত হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ভূমিপুত্র তথা খড়্গপুর বাসীর প্রিয় ‘বেটা’ খোকনের এই হার কিছুটা অপ্রত্যাশিতই ছিল রাজনৈতিক মহলের কাছে। যেখানে সারা রাজ্য ও জেলা জুড়ে অভাবনীয় ফল করে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, সেখানে মাত্র দেড় বছরের বিধায়ক হিসেবে সাফল্যের সাথে কাজ করেও তাঁকে হারতে হবে, ভাবতে পারেন নি প্রদীপ! এদিকে, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং সরকার গঠনের মাসখানেক পরেই (২৪ জুন), অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে সুদূর জলপাইগুড়ি-তে (জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ) বদলি করে দেওয়া হয় টাউন থানার আইসি রাজা মুখার্জি-কে। আর, সেই বদলির মাস তিনেকের মধ্যেই রাজার বাড়িতে দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকদের হানা দেওয়ার মধ্যে রহস্য খুঁজছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ! বুধবার বাড়িতে রাজা মুখার্জি ছিলেন না। না থাকারই কথা। তবে, তাঁর সঙ্গে নাকি ফোনেও যোগাযোগ করা যায়নি! এদিকে, তাঁর ভাড়া বাড়িতে তল্লাশি চলাকালীন নাকি শহরের একাধিক সোনা ব্যবসায়ী-কেও ডেকে আনা হয়েছিল। হয়তো সোনা-দানার কিছু হিসেব মেলানোর জন্য! সবমিলিয়ে ঘটনা-কে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে রেলশহর জুড়ে।