মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ মার্চ: ভারতবর্ষের হাজার হাজার মেধাবী পড়ুয়া ডাক্তারি পড়ার জন্য বেছে নেয় ইউক্রেন দেশটিকে। ভারতের থেকে তুলনামূলক কম খরচে এবং উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত কলেজে (বা, বিশ্ববিদ্যালয়ে) মেডিক্যাল পড়ার ঝোঁক ক্রমেই বেড়েছে গত কয়েক বছরে। এক্ষেত্রেও, National Eligibility Cum Entrance Test (NEET) বা নিট পরীক্ষা পাস করলেই সুযোগ পাওয়া যায়, আলাদা করে কোনো প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়না। ইউক্রেনে ভারতের তুলনায় ডাক্তারি পড়ার কম্পিটিশন কম এবং খরচ বছরে ৪-৫ লক্ষ টাকা মতো। সর্বোপরি, বিশ্বজুড়ে ইউক্রেনের ডিগ্রিকে মান্যতা দেওয়া হয়৷ বিশেষত, মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (MCI), ওয়ার্ল্ড হেলথ কাউন্সিল (WHC) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলি ইউক্রেনের এই এমবিবিএস (MBBS) ডিগ্রিকে মান্যতা দেয়। আর, সেজন্যই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়ারাও গর্বের সাথে ইউক্রেনে পৌঁছে যান ডাক্তারি পড়তে! কিন্তু, এই মুহূর্তে সেই ইউক্রেন হয়ে উঠেছে মৃত্যু উপত্যকা। রাশিয়ার আক্রমণে বিধ্বস্ত সেই দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন ভারত, পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশের পড়ুয়ারা। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকও চুপ করে বসে নেই। শুরু হয়েছে পড়ুয়া সহ ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার অভিযান- ‘অপারেশন গঙ্গা’ (Operation Ganga)। C-17 বিমানে (C- 17 Aircraft) করে ফিরছেন ভারতীয় পড়ুয়া তথা সেদেশে কর্মরতরা। শুক্রবার সকালে অন্তত ৬৩০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে রোমানিয়া থেকে যে এয়ারক্রাফট-টি রওনা হয়েছে ভারতের উদ্দেশ্যে, সেই বিমানে আছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ও মেদিনীপুর শহরের দুই ডাক্তারি পড়ুয়াও। আপাতত তাঁদের জন্য উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন পরিবার-পরিজন থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী টাঁকশাল অর্থাৎ বি.আর.বি (Bharatiya Reserve Bank)-তে কর্মরত নির্মাল্য মুখার্জি’র মেধাবী সন্তান রোহন মুখার্জি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর নিট উত্তীর্ণ হয়ে ইউক্রেনের ব্ল্যাক সি ন্যাশনাল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (Petro Mohyla Black Sea National University University in Mykolaiv, Ukraine) ভর্তি হয়েছিলেন। বর্তমানে, চতুর্থ বর্ষে (অষ্টম সেমিস্টার) পাঠরত রোহন-কে নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন তাঁর বাবা-মা সহ পরিবার পরিজনেরা! কারণ, যে কৃষ্ণ সাগর (Black Sea) দিয়ে রাশিয়া আক্রমণ চালাচ্ছে, সেই কৃষ্ণ সাগরের তীরেই রোহনের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (Black Sea National Medical University)। তবে, আপাত স্বস্তি ফিরেছে ভারত সরকারের নজিরবিহীন তৎপরতায়! শুক্রবার সকালে রোমানিয়া থেকে তাঁদের সি-১৭ বিমান রওনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। চরম অসহায়তা আর মৃত্যু আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটানো পশ্চিম মেদিনীপুরের আরেক পড়ুয়াও ওই বিমানেই রোমানিয়া থেকে ফিরছেন বলে জানা গেছে। মেদিনীপুর শহরের আবাস কুইকোটা এলাকার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক নবীন কৃষ্ণ দাসের ছেলে সায়ন দাস ফিরছেন ওই সি-১৭ বিমানে করেই। নবীন বাবু শালবনী ব্লকের গোদাপিয়াশাল স্কুলের শিক্ষক। তাঁর মেধাবী সন্তান কিভ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (Kyiv Medical University)’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। দুঃশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ফিরছেন সায়ন, রোহন-রা। এজন্য, ভারত সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সাথে সাথেই, সন্তানদের অপেক্ষায় উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন নবীন বাবু, নির্মাল্য বাবুরা।