দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ আগস্ট: পশ্চিম মেদিনীপুরের শতবর্ষ প্রাচীন স্কুল। জেলার অন্যতম নামকরা স্কুলও বটে। সেই স্কুলই এবার নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিদ্ধ। স্কুলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করছেন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক থেকে শুরু করে এলাকাবাসী। অভিযোগ পাঠ্যপুস্তক বিক্রি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত ফিস নেওয়া এবং তার বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যূনতম পরিষেবা না দেওয়া নিয়ে! এমনকি বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ে না এসেও, রেজিস্টার খাতায় সই করা নিয়েও। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ পরিচালন সমিতির তরফে আবার বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মেডিকেল লিভ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে ‘দুর্নীতি’ আর ‘অনিয়ম’-ই যেন এখন ‘নিয়ম’ হয়ে উঠেছে গড়বেতার ১৩০ বছরের (১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত) ব্যানার্জীডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে! এমনটাই অভিযোগ সচেতন অভিভাবক থেকে শুরু করে এলাকাবাসীদের।

thebengalpost.net
ব্যানার্জীডাঙা উচ্চ বিদ্যালয় :

বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ, প্রতি বছরই পরীক্ষার শেষে সমস্ত ক্লাসের পাঠ্য পুস্তক ছাত্রদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে, তা বিক্রি করা হয়। বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমগুলিতে নেই পর্যাপ্ত ফ্যান ও লাইট। স্কুল বিল্ডিং এর বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। ফলে ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হয় ছাত্রদের। এছাড়াও, স্কুলে পানীয় জলের ব্যবস্থাও ভালো নয় বলে অভিযোগ ছাত্রদের। অন্যদিকে স্কুলের অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুলের বেশকিছু শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী নিয়মিত স্কুলেই আসেন না! অনেকে মাসের শেষে এসে রেজিস্টার খাতায় সই করে দেয়। এছাড়াও, বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলেও কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা। মিড-ডে মিলের খাবার ৫০ জন খেলে দেখানো হয় ১০০ জন! শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফি ২৪০ টাকা থাকলেও অতিরিক্ত ১১০ টাকা করে ফি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই, ছাত্রদের তরফে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে বিডিও-র কাছে। তারপরেও কোনো সুরাহা হয়নি বলেই দাবি এক অভিভাবকের! এই বিষয়ে গড়বেতা ১নং ব্লকের বিডিও ওয়াসিম রেজা জানান, তিনি অভিযোগ খতিয়ে দেখে তা ডিআই-কে পাঠিয়ে (ফরওয়ার্ড) দিয়েছেন।

অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক সরকার নির্ধারিত ‘মেডিকেল লিভ’-এর থেকে অনেক বেশি লিভ নিয়েছেন বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তথা পরিচালন সমিতির অভিযোগ। এক শিক্ষাবর্ষে সর্বাধিক ১৫ দিন এবং পুরো চাকরিজীবনে সর্বাধিক ৩৬৫ দিন মেডিকেল লিভ নেওয়ার কথা। কিন্তু, ২০২২ সাল পর্যন্ত কোনো কোনো শিক্ষক নাকি এই সংখ্যার দ্বিগুণ পরিমাণ মেডিকেল লিভ নিয়ে ফেলেছেন! বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের তরফে পরিচালন সমিতিকে জানানোর পর, ইতিমধ্যে তা জেলা শিক্ষা দপ্তরের নজরে আনা হয়েছে বলেও সূত্রের খবর। যদিও, ওই শিক্ষকদের অবশ্য দাবি কোন ‘অনিয়ম’ তাঁরা করেননি। প্রধান শিক্ষক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ আনছেন। এই সমস্ত বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদ্যোৎ চক্রবর্ত্তী বলেন, “ছাত্রদের কাছ থেকে পাঠ্য পুস্তক ফেরত নেওয়া হয় অন্যান্য ছাত্রদের দেওয়ার জন্য। বিক্রি করার অভিযোগ মিথ্যে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিতির রেজিষ্টার আগে মেনটেন হতো না। আমি বিদ্যালয়ে আসার পর, প্রক্সি সম্পূর্ন বন্ধ করা হয়েছে। মিড-ডে মিলের খাবারে কারচুপির অভিযোগও ঠিক নয়। এছাড়াও, অতিরিক্ত ভর্তি ফি কারো কাছে জোর করে চাওয়া হয়না। যদি কেউ স্বেচ্ছায় দেয়, সেটা নেওয়া হয়।” মেডিকেল লিভের বিষয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বিস্তারিত জানাননি, তবে এই ধরনের একটি ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) স্বপন সামন্ত জানান, বিষয়গুলি নিয়ে তাঁর কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে, প্রতিটি বিষয়ই খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

thebengalpost.net
সুপ্রাচীন স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুরি ভুরি: