তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জুলাই: স্কুলে পৌঁছেই সবার আগে ঝাঁটা ধরতে হয় শিক্ষকদের। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাঙা মদের বোতল, গ্লাস, সিগারেট-বিড়ির শেষাংশ, গুটকার প্যাকেট, গাঁজার কলকে- প্রভৃতি পরিষ্কার করতে হয়। তারপর শুরু হয় প্রার্থনা। তারপর ক্লাস। এটাই রোজকার নিয়ম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের বৈকুন্ঠপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের। অতিষ্ঠ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা, অভিভাবক অভিভাবিকা, গ্রামবাসী থেকে শুরু করে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। কিছুতেই, দুষ্কৃতীদের শায়েস্তা করা যাচ্ছে না! প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকরা বললেন, “কখনও কখনও গামছা পরেও আমাদের মাঠে নামতে হয়। সেজন্য স্কুলে আমরা গামছা রেখেছি!” কারণ? প্রধান শিক্ষক বললেন, “এই ঘটনার প্রতিবাদ করলেই দুষ্কৃতীরা স্কুল চত্বরে বা শ্রেণিকক্ষের সামনে মলত্যাগ করে চলে যায়!” বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি শুকদেব দোলুই জানিয়েছেন, “সত্যিই আমরা অতিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের এই ধরনের নোংরামিতে। আমরা অনেকবার পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিচ্ছু লাভ হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে অনেকবার। আবারও আপনাদের মাধ্যমে আবেদন জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সর্বশিক্ষা মিশনের (বর্তমানে, সমগ্র শিক্ষা মিশন) আওতায় ২০০২-‘০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দাসপুরের এই বৈকুন্ঠপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র বা MSK। বর্তমানে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। এই মুহূর্তে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৮০। শিক্ষক ৪ জন। আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্ষেপের সুরে বলেন, “প্রতিদিন স্কুল খোলার পরেই দেখি ভাঙা কাঁচের বোতল পড়ে রয়েছে স্কুল চত্বর থেকে শুরু করে খেলার মাঠ সর্বত্র। নিজেরাই পরিষ্কার করি, নাহলে ছোট ছোট বাচ্চাদের বিপদ হতে পারে যেকোনোও সময়। এছাড়াও, বিড়ি, গাঁজার কলকে, গ্লাস, গুটখা প্রভৃতি তো আছেই!” তিনি এও জানান, “বিদ্যালয়ের প্রাচীরটা একটু ছোটো। সেজন্যই দুষ্কৃতীদের এই উৎপাত। পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুলিশ দেখলেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।” তাঁর মতে, “প্রতিবাদ করলে আবার দুষ্কৃতীরা চরম নোংরামি করে! তখন আমাদের গামছা পরে নামতে হয়। ছাত্ররাও হাত লাগায়। কারণ, আমাদের এই সমস্ত স্কুলে তো চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নেই।” তবে, এই সব কারণেই যে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী কমছে, তা নিয়েও আক্ষেপ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির সভাপতিও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, “প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এই বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করুন।”