মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জানুয়ারি: “এ কলেজ নিজেই এক ইতিহাস”! ইংরেজ শাসনের নির্মমতা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী মেদিনীপুর কলেজ সার্ধ শতবর্ষে পদার্পণ করল। আজ, রবিবার (৩০ জানুয়ারি) ছিল সেই গৌরবোজ্জ্বল ১৫০ বছর উদযাপনের প্রথম দিন অর্থাৎ কলেজের জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠা দিবস। যথাযথ মর্যাদায় আগামী একবছর ধরে চলবে এই গৌরবময় অধ্যায় উদযাপনের নানা অনুষ্ঠান। তবে, ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ, নিজের সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে এদিনের অনুষ্ঠান অনাড়ম্বর ভাবেই পালন করল, পূর্ব ঘোষণা মতোই। অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসকদের হত্যাকারী শহীদ দীনেশ, প্রদ্যোৎ, ব্রজকিশোর, নির্মলজীবন, মৃগেন্দ্রনাথ-দের স্মৃতিধন্য কলেজ প্রাঙ্গণে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর, মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, উদ্বোধনী সঙ্গীত, বক্তৃতা, স্মৃতিচারণা সহ সংক্ষিপ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আর, ১৫০ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনই ‘স্বশাসিত’ (Autonomous) এই কলেজ তার আগামী’র স্বপ্ন ও অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে দিল! অধ্যক্ষ ড. গোপাল চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, “অবিভক্ত মেদিনীপুরের গর্বের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ‘অটোনমাস’ বা ‘স্বশাসিত’ স্বীকৃতি। ন্যাক (NAAC), ইউজিসি (UGC) থেকে পেয়েছে সর্বোচ্চ অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বা মর্যাদা। এরপরে, আমাদের লক্ষ্য হতে চলেছে, একক বিশ্ববিদ্যালয়ে (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই) উন্নীত হওয়া।” সেই অঙ্গীকারই নেওয়া হয়েছে মেদিনীপুর কলেজের ১৫০ তম জন্মদিনে! কলেজের অন্যান্য অধ্যাপকরাও বললেন, “Unitary University বা Deemed to be University হতেই পারে এই কলেজ। অন্তত আমরা সেই স্বপ্ন-ই দেখছি।” অধ্যক্ষ ড. গোপাল চন্দ্র বেরা ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলাশাসক কেম্পা হোন্নাইয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লান কুসুম ঘোষ, কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. মুকুল রঞ্জন রায়, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. প্রবীর চক্রবর্ত্তী, প্রাতঃকালীন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. গৌতম ঘোষ এবং বিধায়ক (খড়্গপুর গ্রামীণ), এমকেডিএ চেয়ারম্যান তথা কলেজের প্রাক্তনী দীনেন রায় ও মেদিনীপুর পৌরসভার পৌরপ্রশাসক তথা কলেজের আরেক প্রাক্তনী সৌমেন খান প্রমুখ। এছাড়াও, উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং সীমিত সংখ্যক কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর কলেজের ১৫০ তম প্রতিষ্ঠা দিবস :

thebengalpost.net
প্রদীপ প্রজ্জ্বলন:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি এক সাংবাদিক বৈঠকে কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোপাল চন্দ্র বেরা জানিয়েছিলেন, “সরকারি বিধিনিষেধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা-কে মাথায় রেখে, অনাড়ম্বর ভাবেই উদযাপন অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। ৩০ জানুয়ারি কলেজের পতাকা উত্তোলন সহ সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, আগামী মার্চ মাসে পূর্ব পরিকল্পিত পূর্ণাঙ্গ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ঠিক সেভাবেই এদিনের অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে তবে মর্যাদাপূর্ণ ভাবেই আয়োজিত হয়। বিপ্লবীদের স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যমণ্ডিত এই মেদিনীপুর কলেজের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৮৭৩ সালে। রবিবার (৩০ জানুয়ারি) কলেজের ১৫০-তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হল। একইসঙ্গে সার্ধ শতবর্ষ অনুষ্ঠানের সূচনাও হল। তবে, সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে মেদিনীপুর কলেজ (অটোনোমাস) অনাড়ম্বর ভাবেই পালন করল এদিনের অনুষ্ঠান। ৭ দিন ধরে যে সকল অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, তা আগেই স্থগিত করা হয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে। আগামী মার্চ মাসে সাড়ম্বরে সেই সমস্ত অনুষ্ঠান পালিত হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ গোপাল চন্দ্র বেরা। তিনি জানান, “নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গৌরবময় দেড়শ বছর উদযাপনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছিলেন কলেজের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি মানুষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের সেমিনার, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা প্রদর্শনী, নাট্য উৎসব ইত্যাদির মাধ্যমে সাত দিনের এই অনুষ্ঠান সূচি তৈরি হয়েছিল। কলেজের দেড়শ বছরের ইতিহাস, প্রাক্তনীদের স্মৃতিকথা, কলেজ থেকে গত ১৫০ বছরে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গবেষণামূলক রচনা সম্ভার ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছিল প্রকাশিতব্য চারটি বই। সেই কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। স্মারক ডাকটিকিট, মেদিনীপুর কলেজের নামে একটি নতুন গোলাপ চারা (জকপুরের বিখ্যাত অশোক মাইতির ‘পুষ্পাঞ্জলি’ নার্সারি থেকে), সুউচ্চ ক্লক টাওয়ার বা ঘড়ি স্তম্ভ, অভিনব স্মারক ভাস্কর্য ইত্যাদি কাজগুলিও প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর মেদনীপুর কলেজের পাঁচ শহীদ ছাত্রের (শহীদ দীনেশ গুপ্ত, শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, শহীদ ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, শহীদ নির্মল জীবন ঘোষ, শহীদ মৃগেন্দ্র নাথ দত্ত) স্মরণে দেওয়াল ভাস্কর্য নির্মাণ এবং প্রাক্তনীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা পাঁচ তলা ‘প্রাক্তনী ভবন’ও সম্পূর্ণ হয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বার্থে মেদিনীপুর কলেজ একটি গ্রাম (শালবনী ব্লকের গোয়ালডিহি) ও একটি স্কুলকে দত্তক নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, সেই কাজও জেলাশাসকের অনুমতিক্রমে এগিয়েছে। এই সব কিছুই মেদিনীপুর কলেজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, আগামী মার্চ মাসে এই সবকিছু সহ কলেজ সাড়ম্বরে তার সার্ধ শতবর্ষ অনুষ্ঠান পালন করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।”

thebengalpost.net
অধ্যক্ষের বার্তা:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন :