মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ জানুয়ারি: উদ্দেশ্য একটাই, শ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে কোম্পানি বা কারখানাকে লাভের মুখ দেখানো। আর, সেজন্যই জেলাশাসক (District Magistrate)-কে চেয়ারপারসন (Chairperson) করে শ্রমিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি এবং মালিক পক্ষের সদস্যদের নিয়ে যৌথ কমিটি গঠন করে, আলোচনার ভিত্তিতে ‘দাবি সনদ’ (COD/ Charter of Demand) প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) জেলা শহর মেদিনীপুরে জেলাশাসকের দপ্তরে (DM Office), তাঁর উপস্থিতিতেই এই ‘দাবি সনদ’ স্বাক্ষরিত হল। খড়্গপুর শহরে অবস্থিত ‘ভগবতী ফুড প্রাইভেট লিমিটেড’ Bhagwati Food Pvt. Ltd.) এর এই ‘চার্টার অফ ডিমান্ড’ বা ‘দাবি সনদ’ স্বাক্ষরিত হল, দুই পক্ষের মধ্যে। ‘কমিটি ফর এমপ্লয়মেন্ট এন্ড ফাইনালাইজেশন অফ সিওডি’ (Committee for Employment and Finalization of COD) এর চেয়ারপারসন (Chairperson) জেলাশাসক আয়েশা রানী’র উপস্থিতিতে এই স্বাক্ষর করলেন ভগবতী ফুড প্রাইভেট লিমিটেড- এর শ্রমিক প্রতিনিধি তথা চারটি শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা এবং কারখানার মালিকপক্ষ তথা ভগবতী ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের আধিকারিকরা।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলাশাসক আয়েশা রানী জানিয়েছেন, “গত সেপ্টেম্বর (২০২২) মাসে এই সিওডি বা দাবি সনদ প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। উভয় পক্ষের বক্তব্য বিবেচনা করে বা উভয়ের স্বার্থকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে এই সিওডি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ তাতে স্বাক্ষর করলেন শ্রমিক ও মালিক পক্ষ।” জানা গেছে, ভগবতী ফুড প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে প্রায় ৭৫০ জন শ্রমিক যুক্ত আছেন। তাঁদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে কারখানার চারটি ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের জেলাশাসকের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে রাখা হয়েছিল। ছিলেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরাও। এমনকি শ্রমিকের মধ্য থেকেও কয়েকজনকে এই ২০ জনের কমিটিতে রাখা হয়েছিল। সকলের সম্মিলিত মতামত নিয়েই প্রস্তুত করা হয়েছে সিওডি। যেখানে শ্রমিকদের স্বার্থে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেমন- শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বৃদ্ধি করা হবে ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত, নাইট ডিউটির ক্ষেত্রে দিন পিছু অতিরিক্ত ২০ টাকা এবং নির্দিষ্ট দিনের (২৩ দিনের) বেশি ডিউটি করলে বা অতিরিক্ত ডিউটি করলে দিন পিছু অতিরিক্ত ২৫ টাকা ভাতা (Allowance) দেওয়া হবে। এছাড়াও, উৎপাদনের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ শ্রমিকদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই ‘দাবি সনদ’ অনুযায়ী। জেলাশাসক জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে জেলার অন্যান্য কোম্পানি বা শিল্প সংস্থা গুলিও সিওডি মেনে কাজ করছে। এর ফলে, কারখানাতে আন্দোলন বা ধর্মঘটের সম্ভাবনা যেমন কমে, ঠিক তেমনই শ্রমিক ও মালিক উভয়ের স্বার্থই সুরক্ষিত থাকে বলে তিনি জানিয়েছেন।