দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ আগস্ট: প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা প্রাক্তন BCCI প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা-৩ নং ব্লকের চন্দ্রকোনা রোড সংলগ্ন ডুকিতে ৩৫০ একর জমি মাত্র ১ টাকায় লিজ দিয়েছে রাজ্য সরকার তথা রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম। ডুকিতে অবস্থিত প্রয়াগ ফিল্মসিটি’র অব্যবহৃত জমির মধ্যে ৩৫০ একর জমি সৌরভের ক্যাপ্টেন কোম্পানিকে সম্প্রতি শিল্প উন্নয়ন নিগমের তরফে হস্তান্তরিত করা হয়েছে বলে জানা যায়। মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে প্রয়াগের ওই জমি লিজ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায়। আর তা নিয়েই এবার জনস্বার্থ মামলা (PIL) হল কলকাতা হাইকোর্টে! বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টি.এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের বেঞ্চে মামলা উঠলে, তাঁরা মামলাটি চিটফান্ড সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে ওই বিশেষ বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত। খুব শীঘ্রই তাঁদের বেঞ্চে মামলার শুনানি হবে বলে জানা গেছে।

thebengalpost.net
প্রয়াগ ফিল্মসিটি’র মূল ফটক:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের ডুকিতে ‘ফিল্মসিটি’ তৈরির জন্য প্রয়াগ গোষ্ঠীকে প্রায় ৭৫০ একর জমি দিয়েছিল রাজ্য। ওই জমির জন্য এবং ‘ফিল্মসিটি’ প্রকল্পের কাজে প্রায় ২৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল প্রয়াগ গোষ্ঠী। ২০১২ সালে প্রায় ৪০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা ফিল্মসিটি’র উদ্বোধন করেন শাহরুখ খান। পরবর্তী সময়ে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় নাম জড়ায় প্রয়াগ সংস্থার। আমানতকারীদের জমানো ২৭০০ কোটি টাকা ওই ‘ফিল্মসিটি’ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় সেই সময় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস.পি তালুকদারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। এর পর আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর উদ্দেশ্যে রাজ্য প্রয়াগ গোষ্ঠীর সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করেছিল। বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তির তালিকায় ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের এই ৭৫০ একর জমিও। কিন্তু, সেটির এখনও পর্যন্ত কোনও নিষ্পত্তি হয়নি। আমানতকারীদের সকলে এখনও টাকা ফেরত পাননি।

এরই মধ্যে কারখানা বানানোর জন্য সৌরভকে ১ টাকার বিনিময়ে ৩৫০ একর (৭৫০ একরের মধ্যে) জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কেন প্রয়াগ গোষ্ঠীর বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তি আবার অন্যকে দেওয়া হচ্ছে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন এস.কে মাসুদ নামে এক আমানতকারী। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, চিটফান্ড সংক্রান্ত মামলার শুনানির জন্য গঠিত বিশেষ বেঞ্চে অর্থাৎ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। মামলাকারীর আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার আদালতে বলেন, “প্রয়াগ গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল রাজ্যের। সেই মতো ওই জমি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা পাইয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু, তা না করে রাজ্য কী ভাবে সৌরভকে কারখানা তৈরির জন্য ১ টাকায় ৯৯৯ বছরের জন্য ওই জমি লিজে দিল?” এদিকে মামলার খবর বিকেল নাগাদ মেদিনীপুরে পৌঁছনোর পরই, ইস্পাত কারখানা ঘিরে আশার আলো দেখা জেলাবাসীর মনের কোণে ফের হতাশার মেঘ জমতে শুরু করেছে!

thebengalpost.net
সৌরভের কারখানা ঘিরে অনিশ্চয়তার অন্ধকার: