দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ সেপ্টেম্বর: প্রায় এক দশক পর খুলতে চলেছে খড়্গপুরের রামস্বরূপ কারখানা। সিন্ডিকেট, ধর্মঘট, নিজেদের লোক ঢোকানো, স্থানীয় নেতাদের তোলা আদায়-: প্রভৃতি কারণে চালু হওয়ার মাত্র দু-তিন বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুরে অবস্থিত রামস্বরূপ লৌহ উদ্যোগ লিমিটেড। দীর্ঘ ১২-১৩ বছর পর শ্যাম মেটালিক সেল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড এবং এসএস ন্যাচারাল রিসোর্সেস প্রাইভেট লিমিটেডের হাত ধরে ফের নতুন করে খুলতে চলেছে রামস্বরূপ কারখানা (Ramswaroop Factory)। জানা যায়, ২০০৬-০৭ সাল নাগাদ খড়গপুর শিল্পতালুকের প্রায় ৩৭৪ একর জমির উপর তৈরি হয় রামস্বরূপ স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি শ্রমিক এই কারখানায় কাজ করত। কিন্তু ২০০৯-‘১০ সাল নাগাদ কারখানা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
এজন্য, সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু (CITU) এবং সিপিআই এর শ্রমিক সংগঠন AITUC-কেই দায়ী করেছেন কাজ হারানো শ্রমিকদের অধিকাংশরা। তাঁদের অভিযোগ, “লুটেপুটে খেয়েছেন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু এবং সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি’র নেতারা। অধিকাংশ নেতা কাজ করতেন না। শধু বেতন নিয়েই বাড়ি ফিরতেন। উৎপাদন আদৌও হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা ছিল না তাঁদের। ম্যানেজমেন্টের লোকেদের ভয় দেখিয়ে লোহা থেকে বেশি পরিমাণে ছাঁট বের নিয়ে তা বাজারে বিক্রি করে দিতেন।” কারখানার প্রাক্তন শ্রমিক মন্টু চট্টোপাধ্যায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “ইউনিয়নের নেতারা কী করেননি? কর্তৃপক্ষের লোকজনকে ভয় দেখিয়েছে। মারধর করেছে। কারখানার মাল বাইরে বিক্রি করে দিয়েছে। এক শ্রেণির নেতারা তোলা আদায় করেছে। তোলা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। কোনও দাবি নিয়ে সঠিকভাবে আলোচনা না করেই কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকেছে। বামেদের সিন্ডিকেটের কারণেই ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কারখানা।” তবে, সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্ট বলেন, “সব ঠিকঠাক-ই চলছিল। ২০০৮ সাল থেকে তৃণমূলের প্রতিপত্তি একটু বাড়তেই গুন্ডামি শুরু হয়। নিজেদের লোক ঢোকানো থেকে তোলা আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে। আর, এরকমই নানা চাপের মুখে পড়ে ২০০৯ এর শেষের দিক থেকে সাময়িক ভাবে কারখানা বন্ধ হয়। এরপরই, সেই ভয়াবহ তৃণমূল-মাওবাদী সময়! বামেরাই যদি দায়ী হয়, ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তৃণমূল সরকার কারখানা খোলার উদ্যোগ নেয়নি কেন?” এদিকে, কারখানা ফের খুলছে শুনে মুখে হাসি ফুটেছে মন্টুবাবুর মতো অনেক প্রাক্তন শ্রমিকেরই।
জানা গিয়েছে, কারখানা খোলার সময় ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল রামস্বরূপ। কিন্তু, সেই ঋণ শোধ করতে না পারায় নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে তারা। প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা দিয়ে এই কারখানায়টি বর্তমানে নিয়েছে শ্যাম মেটলিক গ্রুপ। স্থানীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই কারখানায় মরচে পড়া যন্ত্রাংশ পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কারখানার ইতিউতি জন্ম নিয়েছিল আগাছা। সেগুলোও পরিষ্কার করা হচ্ছে। আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরু হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। এজন্য ফের কারখানায় লোক নেওয়া হবে। এই বিষয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি গোপাল খাটুয়া বলেন, “ওই কারখানায় ২৫০০ জনের মধ্যে প্রায় ৩৬০ জন স্থায়ী শ্রমিক ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই আজ বৃদ্ধ, অনেকে অন্যান্য জায়গায় কাজ করছেন। কিন্তু, ২০০ জন মতো এখনও রয়েছেন, যাঁরা কোনও কাজ পায়নি। আমরা চাই তাঁদেরকে কিংবা তাঁদের পরিবারের লোকেদের কাজ দেওয়া হোক। তাছাড়া স্থানীয়দের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “বামেদের অত্যাচারে কারখানা বন্ধ করে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন মালিকরা। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলায় ফের বন্ধ কারখানা খুলতে চলেছে। এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে!”