দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ মে: এমনিতেই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দূষণ ছড়ানো থেকে বেআইনিভাবে জমি দখলের অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন ধরেই। প্রায়শই কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বা মারা যান বলেও অভিযোগ! তার উপর গত দু’দিনে (মঙ্গলবার ও বুধবার) পর পর দুই শ্রমিক (সাঁকলাইল থানার টিকায়েতপুরের সুমিত দাস এবং বিহারের সূর্যপুর এলাকার রাহুল কুমার)-র মৃত্যু ঘিরে, বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ থানার গোকুলপুরে অবস্থিত ওড়িশা মেটালার্জিক্যাল কারখানা (রশ্মি গ্রুপ পরিচালিত)। নূন্যতম সুরক্ষা নেই অভিযোগ তুলে, মৃত শ্রমিকদের সহকর্মীরা (অন্যান্য শ্রমিকরা) ওড়িশা মেটালার্জিক্যাল কারখানা ও অফিসে ভাঙচুরও চালান। এবার, রশ্মি গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তুলে পথে নামলেন মেদিনীপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। শুক্রবার দুপুরে শ্রমিকদের সুরক্ষা, মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, স্থানীয়দের কাজ এবং দূষণ প্রতিরোধের দাবি তুলে প্রায় ঘন্টা দেড়েক জাতীয় সড়ক (৬নং/১৬নং) অবরোধ করেন অগ্নিমিত্রা সহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় ৬নং জাতীয় সড়কে।

thebengalpost.net
জাতীয় সড়ক অবরোধ:

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ রশ্মি মেটালিক্স এবং ওড়িশা মেটালার্জিক্যাল কারখানা সংলগ্ন খড়্গপুর গ্রামীণের সামরাইপুরে (সাহাচক সংলগ্ন) ৬নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। জাতীয় সড়কে বসেই অগ্নিমিত্রা অভিযোগ করেন, “শাসকদল আর পুলিশ-প্রশাসনের মদতে বছরের পর বছর ধরি বেআইনি কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এই কারখানা। ভয়াবহ দূষণের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার, টিবি, COPD, অ্যাজমা-তে আক্রান্ত হচ্ছেন খড়্গপুর ও মেদিনীপুরবাসী। এই কারখানায় স্থানীয়দেরও কাজ দেওয়া হয়না। বাইরে থেকে (ওড়িশা, বিহার) লোকজন নিয়ে এসে কাজ করানো হয়। যাতে কারখানার ভেতরে তাঁরা দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাঁদের বডি হাপিশ করতে (সরিয়ে ফেলতে) সুবিধা হয়! গত মঙ্গলবার আর বুধবার যথাক্রমে সুমিত দাস আর রাহুল কুমার নামে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয় ওপর থেকে পড়ে গিয়ে। এর আগেও এরকম বহু ঘটনা হয়েছে। আমরা দাবি করছি, ওঁদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শ্রমিকদের সুরক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সহ আমরা ৮ দফা দাবি রেখেছি।” অগ্নিমিত্রার বিস্ফোরক দাবি, “এই কারখানা থেকে পুলিশ আর শাসকদল টাকা তোলে। এখানকার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার আর খড়্গপুর টাউন থানার আইসি রাজীব পাল জাতীয় সড়কের উপর বেআইনিভাবে রশ্মির গাড়ি পার্কিং করিয়ে টাকা তোলে। এই সব আমরা বরদাস্ত করব না।” বেলা ২টো নাগাদ রশ্মি কর্তৃপক্ষের তরফে বিজেপি-র স্মারকলিপি গ্রহণ করা হয় এবং আশ্বস্ত করা হয়। তারপরই অবরোধ ওঠে।

thebengalpost.net
যানজট জাতীয় সড়কে:

অন্যদিকে, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা-ও একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রশ্মি মেটালিক্স কারখানার বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক ও মেদিনীপুরের প্রার্থী অগ্নিমিত্রার এদিনের ‘অবরোধ কর্মসূচি’-কে ‘নাটক’ বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সুজয় জানিয়েছেন, “রাম মন্দির উদ্বোধনের সময় এই রশ্মি মেটালিক্স কারখানার মালিককেই যোগী আদিত্যনাথের পাশে বসে ঘি ঢালতে দেখা গিয়েছিল! আর, শাসকদলের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উনি করেছেন; আমি জেলা সভাপতি হিসেবে বলছি একটারও তথ্য প্রমান থাকলে দিন, আমি ব্যবস্থা নেব। আর, রশ্মি মেটালিক্সের দূষণ ছড়ানো থেকে এলাকার সাধারণ মানুষকে নানাভাবে বঞ্চিত করার বিরুদ্ধে আমি প্রথম থেকেই সরব হয়েছি। ওখানে ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের এনে কাজ করানোর বিরুদ্ধেও আমরা প্রতিবাদ করেছি। কিছুদিন আগেই ওরা স্থানীয় একটি রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল, তাও সমাধান করে দিয়েছি। অগ্নিমিত্রা দেবীকে বলব, এসব নাটক না করে, ক্ষমতা থাকলে কেন্দ্রীয় শিল্প মন্ত্রককে বলে রশ্মির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক, ওদের ব্যবসা করার অনুমতি কেড়ে নিক! আমরাও নিশ্চয়ই সবিস্তারে সমস্ত রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাব।” অন্যদিকে, শনিবার সিপিআইএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর তরফেও রশ্মি কারখানার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তুলেছেন বামেরা।

thebengalpost.net
মোতায়েন পুলিশ: