দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৫ জুন: আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ফাইজান আহমেদ (Faizan Ahmed)-র মৃত্যু-রহস্যে চাঞ্চল্যকর মোড়! মৃত্যুর প্রায় দু’বছর পর এবং দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের ঠিক এক বছরের মাথায় জানা গেল, মেধাবী ছাত্র ফাইজানের মাথায় প্রথমে একটি ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল এবং তারপর ঘাড়ে ছুরি মারা হয়েছিল। সবশেষে, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কানের নিচে পিছনের দিকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিশেষজ্ঞ অজয় কুমার গুপ্ত ইতিমধ্যে এই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে। আগামী মাসে (জুলাই) এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট তিনি জমা দেবেন বলেও সর্বভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন সিআইডি’র অবসরপ্রাপ্ত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এ.কে গুপ্ত।

thebengalpost.net
ফাইজান আহমেদ (ফাইল ছবি):

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর (২০২২) আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur)-র লালা লাজপত রায় হোস্টেলের একটি রুম থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল বছর ২৩’র মেধাবী পড়ুয়া তথা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফাইজানের পচাগলা মৃতদেহ। তিনি অসমের (বা, আসামের) গুয়াহাটির তিনশুকিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। এরপর, অসম থেকে তাঁর বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যরা ১৫ অক্টোবর পৌঁছেছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। ফাইজানের বাবা সেলিম আহমেদ মৃতদেহ দেখেই আঁতকে উঠেছিলেন! তাঁর অভিযোগ ছিল, “আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে! অন্তত ৫-৬ দিন আগেই মেরে ফেলা হয়েছে আমার ছেলেকে। দেহ ফুলে গেছে। আমার ছেলের মুখের আদল সম্পূর্ণ বদলে গেছে!” তাঁর মা রেহানা আহমেদ করজোড়ে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন, “আমার ছেলের মৃত্যুর সঠিক বিচার চাই!” এরপরই তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। গত বছর (২০২৩) জানুয়ারি মাসে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এই ঘটনায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ এবং আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষকে চরম ভর্ৎসনা করেন। তাঁরই নির্দেশে, ২০২৩ সালের মে মাসে অসমের ডিব্রুগড়ের কবর থেকে ফাইজানের দেহ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়। দায়িত্বে ছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয় কুমার গুপ্ত।

thebengalpost.net
রেহানা আহমেদ (ফাইল ছবি):

প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরেই ২০২৩ সালের জুন মাসে তিনি (অজয় গুপ্ত) জানতে পেরেছিলেন যে, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছিল ফাইজানের। সেই সময় তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ওই ছাত্রকে ভারী কিছু দিয়ে অথবা ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা ছুরিও হতে পারে অথবা ধারালো রড জাতীয় কোনও বস্তুও হতে পারে, যেটা তাঁর ঘাড়ে ডান দিক থেকে বাঁ দিকে প্রবেশ করেছিল। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্ট পাওয়ার পর, চলতি বছর (২০২৪) মে মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ তিনি হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট জমা দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ফাইজান আহমেদের ডান দিকের কানের নিচে একটি হাড় অনুপস্থিত ছিল। তাছাড়া বাঁ দিকে চোয়াল ও ঘাড়ের নিচে কালশিটে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। তাতে ইঙ্গিত দেয় দেয় ডান দিক থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল এবং বাম কানের নিচে গুলি করা হয়েছিল! জানা যাচ্ছে, আগামী মাসেই এই বিষয়ে হাইকোর্টে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবেন অজয় কুমার গুপ্ত। ফাইজান আহমেদের মা রেহানা এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি, আমার ছেলেকে এমন নৃশংস ভাবে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হবে। এখন আমার মনে হয় না যে এটা কোনও একজন ছাত্রের কাজ হতে পারে!” আপাতত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের চূড়ান্ত রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে। ‘বিষয়টি বিচারাধীন’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিক।

thebengalpost.net
ফাইজানের পরিবার মেদিনীপুরে (ফাইল ছবি):