দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৮ জুন: বাবা-কে হারিয়েছেন বছর দুয়েক আগে। তার পর থেকে মা-ই অভিভাবক, একমাত্র আদর-আবদারের জায়গা। দিনকয়েক আগে বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। তারপরই এই কাণ্ড! সোমবার সাত সকালেই কেরলের ছেপড় থানার উত্তর এভুর বাসিন্দা তথা আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) বায়োটেকনোলজি ও বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী দেবীকা পিল্লাই (Devika Pillai)-র ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়! খড়্গপুর আইআইটি’র সরোজিনী নাইডু হলের আবাসিক দেবীকা-র দেহ ঝুলছিল হোস্টেলেরই ছাদ থেকে। গলায় ছিল শক্ত পোক্ত নাইলনের দড়ির ফাঁস। সেই ফাঁসেও আবার ফুটে উঠেছে দক্ষ ‘ফাঁসুড়ের’ সুনিপুণ শৈলী! সোমবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর মেয়ের দেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন মা শ্রীলেখা পিল্লাই (দেবীকা পিল্লাইয়ের মা)। কোনও অভিযোগ তিনি করেননি। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠছে একাধিক!

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গেরর সামনে:

thebengalpost.net
দেবীকা পিল্লাই (Devika Pillai):

সোমবার (১৭ জুন) সাত সকালেই সরোজিনী নাইডু হলের ছাদ থেকে, সরোজিনী এবং ইন্দিরা গান্ধী হলের ঠিক মাঝের ফাঁকা জায়গায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেবীকা-র দেহ ঝুলতে দেখেন ওই দুই হলের ছাত্রীরা। এরপরই, কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হলে, তাঁরা খড়্গপুর টাউন থানায় জানান। পুলিশ এসে ঝুলন্ত মৃতদেহ নামিয়ে, নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। হাতে ছিল দামি রিস্ট ওয়াচ বা হাত ঘড়ি! পরনে ছিল সবুজ কুর্তি ও কালো ট্রাউজার। কিন্তু, পুলিশ সহ প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেরই চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায়, গলায় লাগানো হলুদ রঙের শক্ত পোক্ত নাইলনের দড়ির ফাঁস দেখে! ‘নিজের’ মৃত্যু নিশ্চিত করতেই হয়তো ইউটিউব দেখে এমন সুনিপুণ ‘ফাঁস’ তৈরী করা শিখেছিলেন দেবীকা। কিনে নিয়ে এসেছিলেন শক্ত পোক্ত নাইলনের দড়ি! পুলিশের একটি সূত্রে তেমনটাই অনুমান করা হলেও, পড়ুয়াদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, মেয়েদের হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে। এত রাতে কিভাবেই বা একা একা ছাদে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে ফাঁস তৈরী করে, ছাদ থেকে নিচে ঝুলে পড়লেন দেবীকা? ওই দড়িই বা কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন দেবীকা? সেই প্রশ্নও উঠছে। এত রাতে (বা, ভোর রাতে) হাতে ঘড়ি (রিস্ট ওয়াচ) পরেই বা কেন আত্মহত্যা করতে গেলেন মেধাবী ওই ছাত্রী? যদিও, ঠান্ডা মাথায় নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ‘কঠোর’ সিদ্ধান্ত যাঁরা নিয়ে ফেলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নাকি এগুলো বড় বিষয় নয়! এমনটাও বলছেন মনোবিদদের একাংশ। ব্যর্থতা বা হতাশা সহ্য করতে না পেরে, মেধাবীরা যে প্রায়শই আত্মহননের পথে পা বাড়ান; তাও জানাচ্ছেন মনোবিদেরা।

thebengalpost.net
এভাবেই ঝুলছিল দেহ:

সূত্রের খবর, দেবীকা-র রুম থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরি-তে লেখা সুইসাইড নোটে নাকি নিজের ‘আত্মহত্যা’র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি! সেই লেখার ছত্রে ছত্রে নাকি ‘হেরে যাওয়ার কথা’ ফুটে উঠেছে! হতাশা-অভিমানের অভিব্যক্তিও নাকি ঝরে পড়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ। সোমবার দুপুর ২-টো নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পৌঁছয় দেবীকা-র দেহ। তার আগে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে পুলিশের উপস্থিতিতে আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষের তরফে মৃতদেহ ভালো করে নিরীক্ষণ করা হয়েছে এবং ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়েছে। ফাইজান আহমেদের ঘটনা (পচাগলা অবস্থায় ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর অসমের গুয়াহাটির তিনশুকিয়ার বাসিন্দা তথা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ফাইজানের দেহ উদ্ধার হয় লালা লাজপত রায় হলের রুম থেকে) থেকেই হয়তো এবার আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি কর্তৃপক্ষ! যাতে আদালতে আর হেনস্থার শিকার হতে না হয়, সেজন্যই পুলিশের তরফেও ময়নাতদন্তের ভিডিওগ্রাফি সহ সতর্কতামূলক সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন দেবীকা-র মা শ্রীলেখা পিল্লাই সহ আত্মীয়-স্বজন, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও সহপাঠীরা। তারপর থেকে একবারের জন্যও দেবীকা-র মৃত্যু নিয়ে মুখ খোলেননি পরিবার কিংবা প্রতিষ্ঠানের কেউই। তবুও, দেশের প্রাচীনতম এই প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থানের (Oldest IIT) ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে নানা অভিযোগ তুলছেন পড়ুয়া, অভিভাবক থেকে সচেতন নাগরিকদের একাদশ!

thebengalpost.net
গলার ফাঁস:

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যালে দেহ: