দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২০ অক্টোবর:”হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকবেন না। খড়্গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur) একেবারেই নিরাপদ নয়!” বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) খড়্গপুর টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বেরোনোর পর, এভাবেই অন্যান্য অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কাতর আবেদন করলেন মৃত ফাইজান আহমেদের মা রেহানা আহমেদ! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) আইআইটি খড়্গপুরের লালা লাজপত রায় হস্টেল বা হলের (L.L.R Hall) একটি রুম থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ফাইজান আহমেদের (২৩) পচাগলা দেহ উদ্ধার করে টাউন থানার পুলিশ। অস্বাভাবিক ও রহস্যময় এই মৃত্যুর তদন্ত শুরু করে পুলিশ এবং ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তার পরদিনই সুদূর আসাম (তিনসুকিয়া) থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে ছেলেকে খুনের অভিযোগ করেছিলেন ফাইজানের বাবা সেলিম আহমেদ এবং মা রেহানা আহমেদ। ‘মৃতদেহ’ দেখে ওইদিন তাঁরা বিস্ফোরক অভিযোগ করে এও জানিয়েছিলেন, “এটা আমাদের ছেলে হতেই পারে না! ওর সঙ্গে এই মৃতদেহের কোন মিল নেই। আমাদের ছেলেকে খুন করে, কুকুর বিড়ালের মতো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! আমরা ইনসাফ চাই।” তাঁরা ডিএনএ পরীক্ষারও আবেদন জানিয়েছিলেন। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) একেবারে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীকে সঙ্গে করে পৌঁছে যান ফাইজানের পরিজনেরা। খড়্গপুর টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ বা এফআইআর (FIR) দায়ের করে আবেদন জানান, “দ্রুত তদন্ত শেষ করে, রিপোর্ট দিন। নাহলে আমরা কলকাতা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব!” অন্যদিকে, আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টর বিল্ডিং ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন পড়ুয়ারা। দাবি করেছেন, সঠিক তদন্তের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইআইটি খড়্গপুরের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র ফাইজান থাকতেন রাজেন্দ্র প্রসাদ হলে (R.P Hall); কিন্তু তাঁর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়েছিল লালা লাজপত রায় হল থেকে। মৃত্যুর অন্তত দু-তিন দিন পর দেহ উদ্ধার হয়েছিল বলে অভিযোগ! আইআইটি খড়্গপুরের মতো নামকরা এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিভাবে তা সম্ভব? এই প্রশ্ন উঠেছিল সব মহল থেকে। দু’দিন ধরে ওই পড়ুয়াকে কেউ দেখতে না পেয়েও, কেন কোনো পদক্ষেপ করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। সরাসরি খুনের অভিযোগ করেন তাঁর বাবা-মা। ঘটনায় জড়ায় রাজনীতিও। আইআইটি’র গেটের বাইরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। এর পর, আজ, বৃহস্পতিবার, খড়্গপুর টাউন থানা ও আইআইটি (IIT Kharagpur)-তে পৌঁছন মৃতের পরিজনেরা। সঙ্গে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অনিরুদ্ধ মিত্র। তাঁরা এদিন পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন এবং খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরই মৃত পড়ুয়া ফাইজান আহমেদের মা রেহানা আহমেদ পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সতর্ক করে হাতজোড় করে আবেদন জানান, “ঘুমিয়ে থাকবেন না, আপনারা জেগে উঠুন! অভিভাবকদের বলছি ছেলে-মেয়েকে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকবেন না। এই খড়্গপুর আইআইটি নিরাপদ নয়।” এরপর, সন্ধ্যাতেই পড়ুয়ারা বিক্ষোভ শুরু করেন। কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ আঁটলেও এই মুহূর্তে যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে আইআইটি খড়্গপুর চত্বরে।