দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মণিরাজ ঘোষ, ৪ নভেম্বর: একাদশ শ্রেণীর প্রথম দিকেও সে শোনেনি আইআইটি (IIT)’র কথা। একাদশ শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার কিছুদিন আগে ছোটন জানতে পারে, “আইআইটি কি জিনিস! কেন আইআইটি’র প্রতি সবার এতো শ্রদ্ধা-আগ্রহ।” সেই শুরু “দিন-রাত এক করে পড়াশোনা।” অবশেষে স্বপ্ন সফল! এখন সে আইআইটি খড়্গপুরের বি.টেক (ISE/ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং) প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র। নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না! বৃহস্পতিবার বিকেলে পৃথিবী বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) আকর্ষণীয় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে এভাবেই যেন রূপকথার গল্পগুলো আওড়ে চলেছিল বাঁকুড়ার শালতোড়ার (পাবড়া গ্রামের) ‘ফেরিওয়ালা’ কানাই কর্মকারের ছোটো ছেলে ছোটন কর্মকার!
প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের অখ্যাত এক গ্রামের সামান্য ফেরিওয়ালার ছেলে ছোটন এক নিঃশ্বাসে বলে চলেছিল, “আইআইটি (Indian Institute of Technology) কি জিনিস জানতামই না! আমার স্যার আর বন্ধুরা মাথায় ঢোকায়। একাদশ শ্রেণীর শেষের দিকে জানতে পারি, আইআইটি কি জিনিস। কেন আইআইটি নিয়ে সবার এতো আগ্রহ। তারপর অবশ্য দিন-রাত এক করে পড়াশোনা করেছি!” এবার কিছুটা বিজ্ঞের মতো বলে রাঢ় বঙ্গের সহজ-সরল ছেলেটা, “এত বড় একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান! স্ট্রাগল না করলে কি চান্স পাওয়া যায় বলুন? আমিও অবশ্য অনেক স্ট্রাগল করেছি। দিন-রাত এক করে পড়াশোনা করেছি। আর হ্যাঁ, আমার শিক্ষকরা, বন্ধুরা আর জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ট্রেনিং দেওয়া ইনস্টিটিউটের অবদানও অনস্বীকার্য! প্রচুর সাহায্য পেয়েছি। নাহলে আমার মতো একটা ছেলের পক্ষে আইআইটি ক্র্যাক করা সম্ভব হতো না!” ছোটন মনে করিয়ে দেয় এক বন্ধুর কথাও, “আইআইটি-তে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সবরকম ভাবে সাহায্য করেছে আমার এক বন্ধু।”
এক সামান্য ফেরিওয়ালার ছেলে আইআইটি’র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে। শুনতে গর্বের হলেও, লাগবে অনেকগুলো টাকা। তবে, এমন অমূল্য ‘রতন’ কি আর ধুলোয় গড়াগড়ি যেতে পারে! তাই, ছোটনের বন্ধুবান্ধব এবং সহৃদয় সমাজ কর্মীদের সাহায্যে ভর্তির টাকা সহজেই জোগাড় হয়ে যায়। বুধবার বাঁকুড়া থেকে ছোটনকে ট্রেনে তুলে দিয়েছিলেন অভিজিৎ মণ্ডল নামে স্থানীয় এক শিক্ষক। ছোটনের পকেটে ভর্তির টাকা গুঁজে দেওয়া ছাড়াও, হাতে তুলে দিয়েছিলেন একটি গীতা। সেই গীতা সহ জামাকাপড়, কম্বলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছোটন যখন বুধবার পড়ন্ত বিকেলে আইআইটি খড়্গপুরের মেন গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়, নিরাপত্তারক্ষীরাও কিছু বুঝে উঠতে পারেননি! ছোটনকে জিজ্ঞাসা করলে, সে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলি দেখায়। সসম্মানে পথ ছেড়ে দিয়ে, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন নিরাপত্তা কর্মীরা! শালতোড়া সংলগ্ন পাবড়া গ্রামের বাসিন্দা ছোটন কর্মকারের পড়াশোনা স্থানীয় বাংলা মিডিয়াম স্কুলেই। বাবা চুড়ি-বালা-মালা-খেলনা ফেরি করেন। আই.এস.ই (ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগে ভর্তি হওয়া ছোটন বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘বেঙ্গল পোস্ট‘-কে বলে, “বাবাকে তো সাহায্য করতেই হত। বাবার সঙ্গে জিনিসপত্র কিনতে গেছি। দু’হাতে ভারি ব্যাগ বয়ে নিয়ে এসেছি। এমনকি দু’একবার বিক্রি করতেও গেছি।” সেই ছোটন-ই ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থানের হবু ইঞ্জিনিয়ার! ছোটনের নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না- মাত্র কয়েক মাস আগে দেখা তার স্বপ্ন, সফল হয়েছে। আর, বাবা কানাই কর্মকার তো আইআইটি কি জিনিস জানেনই না! মা’ও তাই। তবে, সকলের মুখে ছেলের এই অসাধ্য সাধনের কথা শুনতে শুনতে কখন যে তাঁদের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে, তা তাঁরা নিজেরাই বুঝতে পারেন না! আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) মদনমোহন মালব্য হলে থাকার জায়গা হয়েছে ছোটনের। গীতার উপর তার অগাধ আস্থা। শুধু একজন ইঞ্জিনিয়ার নয়, একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠতে চায় ছোটন। বলে, “আমার মতোই যারা দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়ে, অথচ অনেক দূর অবধি পড়াশোনা করতে চায়; তাদের জন্য কিছু করতে চাই।” অসম্ভবকে ‘সম্ভব’ করা বাঁকুড়ার ছোটন যে নিজের এই স্বপ্নও একদিন পূরণ করতে পারবে, তা মানছেন সকলেই।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…