দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ অক্টোবর : একটি নয়, দু-দু’টি বৌদ্ধবিহার বা বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঐতিহাসিক মোগলমারিতে। দাঁতন থানার অন্তর্গত এই মোগলমারিতে প্রাথমিক খননকার্যের পর একটি বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ্রের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং মোগরমারি ইতিহাস সংক্রান্ত গবেষক ড. রজত সান্যালের গবেষণায় খোঁজ পাওয়া গেল, ওই জায়গায় একটি নয়, দু’টি বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। এর আগের গবেষণা অনুযায়ী, একটি মহাবিহারের অস্তিত্ব পেয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদ বা পুরাতত্ত্ববিদেরা। যার নাম শ্রীবন্দক-মহাবিহার। ড. রজত সান্যালের বর্তমান গবেষণা অনুযায়ী, একটি নয়, দু’টি শিক্ষায়তনের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। নতুন পাওয়া শিলালিপি অনুযায়ী, যে দু’টি বৌদ্ধ শিক্ষিকেন্দ্রের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, তার একটি হল- ‘যজ্ঞপিণ্ডিক’ এবং অপরটি ‘মুগলায়িক’। এই মুগলায়িক থেকেই ‘মোগলমারি’ নামকরণ বলেও অনুমান করা হচ্ছে!
গবেষক ও পুরাতত্ত্ববিদ ড. সান্যালের মতানুযায়ী, ‘যজ্ঞপিণ্ডিক’ মহাবিহার এবং ‘মুগলায়িক’ তার তুলনায় ছোট বৌদ্ধবিহার। একে ‘বিহারিকা’ বলা যেতে পারে! উদ্ধার হওয়া শিলালিপি পরীক্ষা করে তেমনই মতামত দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পুরাতত্ত্ববিদ। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে ড. সান্যাল এও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে ‘মহাবিহার’ ও ‘বিহার’ এর আগে পাওয়া গেলেও, তুলনায় আরও ছোট ‘বিহারিকা’র সন্ধান এই প্রথম মিললো! উল্লেখ্য, যে গোলাকার প্রত্ন খণ্ডগুলি থেকে যথাক্রমে ‘মহাবিহার’ ও ‘বিহারিকা’র সন্ধান মিলেছে, সেগুলি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুরাতত্ত্ব ও সংগ্রহালয়ের অধিকারে তৎকালীন উপ অধীক্ষক প্রয়াত অমল রায়ের নেতৃত্বে উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এগুলিতে যে অক্ষরগুলি পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলি পঞ্চম শতকের পূর্ব ভারতীয় ব্রাহ্মী লিপি ও সপ্তম শতকের পূর্ণতা প্রাপ্ত সিদ্ধমাত্রিকা লিপির মধ্যবর্তী সময়ের বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, ষষ্ঠ শতকের পাশাপাশি সময়ে এই দু’টি মহাবিহার ও বিহারিকায় একই সঙ্গে পাঠদান করা হত বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে, প্রায় ১৫০০ বছর আগের এই দুই প্রাচীন ও ঐতিহাসিক বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে! তবে, পরবর্তী গবেষণা থেকে এই বিষয়গুলি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
প্রসঙ্গত এও উল্লেখ্য যে, চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং প্রাচীন তাম্রলিপ্ত বন্দরের কাছে বেশ কিছু বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্রের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। তবে, তিনি তার মধ্যে কোনও একটিরও আলাদা করে নাম করেননি। যজ্ঞপিণ্ডিক ও মুগলায়িক সেই কেন্দ্রগুলিরই অন্যতম বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান! অন্যদিকে, ‘মুগলায়িক’ নামটির সঙ্গে মোগলমারি নামের সামঞ্জস্য রয়েছে। কিন্তু, ‘মুগলায়িক’ থেকেই মোগলমারি নাম হয়েছে কি না, তা গবেষণা সাপেক্ষ! দাঁতনের অন্যতম গবেষক সন্তু জানা জানিয়েছেন, “ড. সান্যাল মোগলমারি উৎখননের তৃতীয় পর্যায় থেকে সম্পৃক্ত হয়ে আছেন। তাঁর এই গবেষণা নিঃসন্দেহে মোগলমারির ইতিহাসের আরও একটি দ্বার উন্মুক্ত করে দিল। তবে, আমরা বারবার আবেদন জানাচ্ছি, মোগলমারি’র বুকে এখনও অনেক ইতিহাস চাপা পড়ে আছে! আরও উৎখননের প্রয়োজন। মাত্র ১০ থেকে ২০ শতা খনন হয়েছে। এখনও ৮০ শতাংশ বাকি! মোগলমারি-তে সৌন্দর্যায়ন হচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু সুবৃহৎ এক ইতিহাস অনুসন্ধানের জন্য উৎখনন আরও বেশি প্রয়োজন! আমরা এএসআই (Archaeological Survey of India) এবং প্রশাসনের কাছে এই আবেদন আরও একবার রাখছি।”