মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ ডিসেম্বর: দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে একপ্রকার জবর দখল করে রাখা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টার বা কর্মীদের আবাসন মঙ্গলবার ‘দখলমুক্ত’ করল মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ ছিল, এক প্রকার জোর করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কিংবা তাঁদের পরিজনেরা ‘জবরদখল’ করে রেখেছিলেন ক্যাম্পাস সংলগ্ন নান্নুরচকে (SBI e-corner এর উল্টো দিকে) অবস্থিত ১৭ টি কোয়ার্টার। বারবার নির্দেশ দেওয়া হলেও, আবাসন ছাড়তে রাজি হননি তাঁরা। ফলে নতুন কর্মচারীরা কোয়ার্টার পাচ্ছিলেন না! শেষমেশ কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে ধরানো হয় নোটিশ। আর, মঙ্গলবার এক প্রকার অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হয় ১৬ টি কোয়ার্টার বা আবাসন। বাকি একটিও সোমবারের মধ্যে খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জবরদখলকারীকে। তিনি তাতে রাজি হয়েছেন বলে সূত্রের খবর। এও জানা গেছে, ওই ১৬ টি আবাসনের মধ্যে একটিতে থাকতেন, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাকারী এক মহিলা কর্মী ও তাঁর মা! দিনকয়েক আগেই তাঁদের ‘কীর্তি’ ফাঁস হয়েছে বেঙ্গল পোস্ট সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। তাঁদেরও ওই আবাসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে, মঙ্গলবার কোনো বিশৃঙ্খলা বা অশান্তি ছাড়াই দখলমুক্ত হয়েছে মেডিক্যালের ওই আবাসনগুলি, এমনটাই জানা গেছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যালের ওই আবাসন :

এদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপারসন হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর, মঙ্গলবার এক বৈঠকে সামিল হয়েছিলেন জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল। ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু, সুপার ডাঃ ইন্দ্রনীল সেন ছাড়াও অতিরিক্ত জেলাশাসক (জনস্বাস্থ্য) পিনাকী রঞ্জন প্রধান, জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র প্রমুখ। গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ চত্বর দূষণমুক্ত ও জঞ্জালমুক্ত করতে হবে। অবিলম্বে (দূষিত) বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে ফেলতে হবে ক্যাম্পাস থেকে। প্রসঙ্গত, আইসি বিল্ডিংয়ের এর ঠিক পেছনে (বেসরকারি সংস্থা MRI ভবনের ঠিক পাশেই) বর্জ্য পদার্থের যে স্তূপ তৈরি হয়েছে, তা মেয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বারবার অভিযোগ জানানো হচ্ছিল। ইতিমধ্যে একবার মেদিনীপুর পৌরসভার তরফেও তা পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু, স্থায়ী সমাধান হয়নি। হচ্ছিল পরিবেশ দূষণ। রোগীর পরিজনদেরও নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল! জানা গেছে, বৈঠকে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপারসন। এও জানা গেছে, অবিলম্বে ওই জায়গা থেকে (দূষিত) বর্জ্য পদার্থের স্তূপ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে, বৈঠকে নতুন একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড, কার্ডিওলজি বিভাগ (হৃদরোগের বিভাগ) সহ সমস্ত বকেয়া পরিকাঠামোগত কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। মঙ্গলবার এই বৈঠকের কথা স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “জেলাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে এই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে, বেশিরভাগ কাজই তৎপরতার সঙ্গে চালানো হচ্ছে। শিশু বিভাগ প্রায় সম্পূর্ণ। হৃদরোগের বিভাগ আর আই ব্যাঙ্কের আর সামান্য কাজ বাকি। তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে, নতুন একটি প্রি-ফেব্রিকেটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডও তৈরি করা হবে। হাসপাতাল জঞ্জালমুক্ত করার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।” বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্রও।

thebengalpost.net
এই বর্জ্য পদার্থ অবিলম্বে পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে :