মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জুলাই: জঙ্গলমহলের প্রান্তিক এলাকা শালবনী। ‘কোভিড’ নামক বস্তুটি আসার আগে, এই এলাকার কোনও হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কেউ কোনোদিন আলোচনা করার প্রয়োজনও মনে করেনি! সেটাই ছিল স্বাভাবিক, কারণ, জ্বর-সর্দি ছাড়া কোনো রোগ জ্বালা হলে জঙ্গলমহলবাসীর একমাত্র ভরসা সেই জেলা সদরের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল! কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের পরই আলোচনায় এলো- শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে যখন তা বদলে গেল লেভেল ফোর করোনা হাসপাতালে। জেলার একমাত্র লেভেল ফোর করোনা হাসপাতাল, স্বাভাবিকভাবেই করোনা আক্রান্ত জেলাবাসীর গন্তব্য হয়ে উঠলো শালবনী। দ্বিতীয় ঢেউয়ে অবশ্য, মেদিনীপুর মেডিক্যালের HDU SARI ইউনিট এবং ঘাটাল, ডেবরা প্রভৃতি হাসাপাতালেও করোনা পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়েছে, তা সত্বেও কোভিডের ক্ষেত্রে জেলার সর্বোচ্চ অর্থাৎ লেভেল ফোরের পরিষেবা একমাত্র শালবনীতেই। আর তাই, ভালো-খারাপ বিভিন্ন কারণেই টানা প্রায় দেড় বছর ধরে প্রচারের আলোয় আছে শালবনী সুপার স্পেশালিটি তথা শালবনী করোনা হাসপাতাল। অনেক সাফল্য, আবার একাধিক ত্রুটি ও সমালোচনার শিকার এই শালবনী। তবে, এসব কিছুর মধ্যেই উপেক্ষিত হয়ে থেকে গিয়েছিল, শালবনী গ্রামীণ হাসপাতাল (Salboni Rural Hospital)। অতি সম্প্রতি ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস নতুন ব্লক মেডিক্যাল অফিসার (BMOH) ও সুপারিনটেনডেন্ট (Superintendent) হিসেবে এখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। তার পর থেকেই পরিষেবার মান অভূতপূর্ব ভাবে বদলে যাচ্ছে! সেই সঙ্গে, ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে শালবনীর এই গ্রামীণ হাসপাতালটি ধীরে ধীরে এক উন্নত হাসপাতাল হয়ে উঠছে যেন! শুধু সৌন্দর্যায়নে নয়, চিকিৎসা পরিষেবাতেও “অনন্য” হয়ে ওঠার লড়াইতে একযোগে সামনের দিকে ছুটে চলেছে শালবনী সুপার স্পেশালিটি (বর্তমানে, লেভেল ফোর করোনা হাসপাতাল) এবং রুরাল হাসপাতাল। সর্বোতভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল থেকে শুরু করে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও ব্লক প্রশাসানের পক্ষ থেকেও। শালবনীকে “সেরা” করার যুদ্ধে, আসরে নেমে পড়েছেন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্য সরকারের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত’ও। সকলকে পাশে পেয়ে আপ্লুত স্বাস্থ্যকর্তা ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস “দিন রাত এক করে” পরিশ্রম করে চলেছেন তাঁর টিম নিয়ে। বদলে যাওয়া শালবনীকে নতুন রূপে দেখতে পেয়ে, মুগ্ধ হচ্ছেন এলাকাবাসী থেকে শুরু করে সমাজকর্মীরা।
উল্লেখ্য যে, ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস ঘাটাল মহকুমার বিদ্যাসাগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিএমওএইচ (BMOH) থাকাকালীন, পশ্চিমবঙ্গের ১ নং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিরোপা পেয়েছিল এই কেন্দ্রটি। সেই জায়গাতেই শালবনীকে পৌঁছে দেওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিনি রত। ইতিমধ্যে, নতুন সুপার তথা বিএমওএইচ-এর নেতৃত্বে, সম্পূর্ণ নতুন সাজে সেজে উঠেছে (এবং, উঠছে) হাসপাতাল চত্বর। হাসপাতালের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সৌন্দর্যের ছোঁয়া লেগেছে! নতুন গেট তৈরি হয়েছে। বাগান তৈরি ও পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে। সঙ্গে হাসপাতাল জুড়ে নতুন রং ও পটচিত্রের আদলে নক্সার কাজও চলছে। হাসপাতালে প্রবেশ করার পর, রোগী ও পরিজনদের সুবিধার্থে দিকনির্দেশিকা বোর্ড লাগানো হয়েছে। এছাড়াও, চিকিৎসা সংক্রান্ত একাধিক পরিষেবা নতুন করে শুরু করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। সুপার স্পেশালিটি’র চিকিৎসকদের দিয়ে আউটডোর পরিষেবা, প্রসূতি মায়েদের জন্য বিভিন্ন পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়াও, শিশুদের জন্য উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সর্বোপরি, আগামী দিনে শুধু কোভিডের ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ যেকোনো রোগ-জ্বালা থেকে শুরু করে ছোটখাটো সার্জারি, সাপে কামড়ানো, কুকুরে কামড়ানো প্রভৃতি ক্ষেত্রে আর “রেফার” না করার অঙ্গীকার নিয়েছেন স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এন সি ডি (NCD- Noncommunicable Diseases) অর্থাৎ সুগার, প্রেসার, কলেস্টেরল, ক্যান্সার প্রভৃতি ক্ষেত্রেও স্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের দিয়ে পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ডাঃ বিশ্বাস এও জানিয়েছেন, “প্রসূতি ও বৃদ্ধদের জন্য স্পেশাল ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি শিশুদের জন্যও শুরু হবে। আমরা চেষ্টা করছি, গরীব-অসহায় মানুষদের যাতে মেদিনীপুরেও না রেফার করতে হয়।” এই লক্ষ্যে তাঁর পাশে যে জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা এবং সর্বোপরি মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত আছেন তাও জানিয়েছেন তিনি। ডাঃ বিশ্বাসের কথায়, “এখানে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যে পরিষেবার ব্যবস্থা আছে, তা জেলার আর কোথাও নেই। বাবল ইনফিউশন, ভেন্টিলেশন থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাই করে দিয়েছেন ডি.এম ম্যাডাম। এবার, ইউ এস জি’র বিষয়টিও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের কথা ভেবে, নিকু-পিকু রেডি করা হয়েছে।” অন্যদিকে, শনিবার শালবনীর বিধায়ক তথা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত’র নেতৃত্বে এবং বিডিও প্রণয় দাস, আইসি গোপাল বিশ্বাস ও শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিনু কোয়াড়ি সহ সকল কর্মাধ্যক্ষদের উপস্থিতিতে শালবনীর স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে যে উন্নয়নমূলক বৈঠক হয়েছে, সেখানে শালবনী বাসীর সুদীর্ঘ লালিত স্বপ্নের প্রস্তাবটিও উঠে এসেছে, সুপার তথা বিএমওএইচ এর মুখে। সেটি হলো- শালবনীতে একটি সরকারি নার্সিং কলেজের প্রতিষ্ঠা! বিধায়ক তথা মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত জানিয়েছেন, তিনি তাঁর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে শালবনী বাসীর এই স্বপ্নপূরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…