Health

Mental Depression: আত্মঘাতী তরুণী চিকিৎসকের চিরকুটে ‘অন্তর্বেদনা’! পড়ুয়াদের ‘মনের কথা’ জানতে সাইক্রিয়াটিস্টের সাহায্য নেবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল

মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ নভেম্বর:”ডাক্তারি পড়ুয়াদের মধ্যে মানসিক অবসাদে (Mental Depression) ভোগার হার নিঃসন্দেহে বাড়ছে। এ নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনেও একবার আলোচনা হয়েছিল। এই মেডিক্যাল কলেজেই শুধু নয়, বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসক পড়ুয়াদের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে! আমাদের কলেজে যদিও সাইক্রিয়াটিক (মনোরোগ চিকিৎসা) বিভাগ আছে। পড়ুয়ারা অনেক সময় তাঁদের সাহায্য নেন। কিংবা, আমরা যদি কখনও জানতে পারি, তাহলে আমরাও ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অনেক সময় মানসিক চাপ, আর্থিক চাপ প্রভৃতি কারণে পড়ুয়ারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আমরা জানতে পারলেই, তাঁর কাউন্সেলিং করি, তাঁর সাথে আলোচনা করি। এমনও হয়েছে, তাঁর বাবা-মা’কে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু, কেউ যদি গোপন করেন, নিজের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে গিয়ে হঠাৎ করে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে আমরাও ব্যর্থ হই। তবে, এবার থেকে আমরা আমাদের বিভাগীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাউন্সেলিং চালাবো।” শুক্রবার বিকেলে আমাদের এমনটাই জানিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাত্রি দশটা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উল্টোদিকের গালর্স হোস্টেলের রুম থেকে উদ্ধার হয় মিনি ঘোষ (Mini Ghosh) নামে বছর ২৭ এর ওই তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগে পিজিটি ২য় বর্ষের (PGT 2nd Yr, in the Dept. of Pediatrics) পড়ুয়া ছিলেন ওই তরুণী। বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দি এলাকায়। বাবা বিনয় কুমার ঘোষ পেশায় একজন কৃষক। কিন্তু, কষ্ট করে হলেও মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। মেয়েও স্বপ্ন পূরণ করে চিকিৎসক হয়ে উঠেছিলেন। MBBS এর পর আরও একধাপ এগিয়ে যেতে MD করছিলেন। ভালো ছাত্রী ছিলেন, জানিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা। তবে, একটু ‘অন্তর্মুখী’ (Introvert) বা চাপা স্বভাবের ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন বিভাগীয় প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ। অন্যদিকে, বিভিন্ন সূত্র ধরে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরেই “গভীর মানসিক অবসাদ” (Deep Mental Depression) এ ভুগছিলেন ডাঃ মিনি ঘোষ।

পড়ুয়া চিকিৎসকদের সাথে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু (প্রতীকী ও ফাইল ছবি, মণিরাজ ঘোষ) :

গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাতে, কোতোয়ালী থানার পুলিশ তদন্তে নেমে মিনি’র ঘর থেকে একাধিক ‘কাগজ’ ও ‘চিরকুট’ উদ্ধার করেছিলেন বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এমন একটি ‘পরীক্ষার সাদা পৃষ্ঠা’ তাঁর রুম থেকে পাওয়া গেছে, যেখানে মিনি লিখে রেখেছিলেন কবিতা! আর, ‘কবিগুরু’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেছিলেন। এমন ‘চিরকুট’ও নাকি পাওয়া গেছে, যেখানে মিনি লিখেছিলেন- “এভাবে তিলে তিলে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই ভালো”! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, “এখন জানতে পারছি, ও আগেও এরকম করার চেষ্টা করেছে! আফশোস হচ্ছে, যদি আগে জানতে পারতাম”! মিনি’র ফেসবুক ঘেঁটে যেটুকু উদ্ধার করা গেছে, সেখানে তাঁকে বেশ হাসিখুশি, মিশুকে ও ঘুরতে-বেড়াতে ভালোবাসা মেয়ে বলেই মনে হয়। তবে, মনের মধ্যে যে চাপা কোনো ‘বেদনা’ বা ‘বিরহ’ লুকানো ছিল, তা নিয়ে এখন সংশ্লিষ্ট সকলেই নিশ্চিত! কলেজের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আসলে মিনি উঠে এসেছিলেন একেবারে সাধারণ পরিবার থেকে। ওর মনটাও হয়তো ছিল সাধারণ, সহজ-সরল! তাই হয়তো সামান্য কোনো আঘাতেই ভেঙে পড়েছিলেন”। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ডাক্তারি পড়ুয়া চিকিৎসক জানিয়েছেন, “মনের মধ্যে অভিমান-কষ্ট-বেদনাতো থাকেই! তবে, সবকিছু ছেড়ে, এই ধরনের চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে, সত্যিই কিছু করার থাকেনা, বড্ড অসহায় লাগে”। তবে, শুধু সহপাঠী কিংবা কলেজ কর্তৃপক্ষই নয়, মিনির মধ্যে ন্যূনতম “মানসিক অবসাদ” এর লক্ষণ উপলব্ধি করতে পারেননি তাঁর বাবা-মা কিংবা পরিবার-পরিজনেরা কেউই। তবে, প্রায় তিনমাস বাড়ি যেতে পারেননি মিনি। এ নিয়ে কি কোনও ‘ক্ষোভ’ বা ‘দুঃখ’ ছিল? নিশ্চিত নন কেউই। তবে, কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “কোভিড পরিস্থিতিতে এটা খুবই স্বাভাবিক। যাওয়া-আসার উপর একটা স্বাভাবিক বিধিনিষেধ তো ছিলই। কিন্তু, সেটা এমনও নয় যে, জরুরী প্রয়োজনেও ছাড়া হবেনা! উনি তো কিছু জানানইনি এই বিষয়ে। তাছাড়া, পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে ফোনে নিত্য যোগাযোগ ছিল। ওইদিনও স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেছেন!” ডাঃ কুন্ডু যোগ করেছেন, “আমরা তো বারবার বলছি, কেউ যদি কষ্টের কথা গোপন করেন বা বলতে লজ্জা পান, সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে জানা খুব কঠিন। সেজন্যই এবার থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের (Psychiatrist) বা কাউন্সিলরদের (Counsellor) সাহায্য নেব।”

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু এবং শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ (প্রতীকী ও ফাইল ছবি, মণিরাজ ঘোষ) :

News Desk

Recent Posts

Midnapore: “মন্ত্রীসভাকে বাঁচালে, আমাদের কেন নয়?” সুপ্রিম শুনানির আগেই মেদিনীপুরে মোক্ষম প্রশ্ন ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ এপ্রিল: "আমরা এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। ওঁরা তো…

2 days ago

Midnapore: শালবনীতে জিন্দাল পাওয়ার প্ল্যান্টের শিলান্যাস! মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ এপ্রিল: গত ৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য…

2 days ago

Midnapore: গান শুনিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে নববর্ষের সূচনা জেলা পুলিশের! মেদিনীপুরে অভিনব উদ্যোগ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ এপ্রিল: বছরভর নানা রূপে দেখা যায় পুলিশকে। কখনও…

3 days ago

Midnapore: বুধ থেকে ‘বিকল্প’ পথেই স্কুল সামলাবেন প্রধান শিক্ষকরা! সিদ্ধান্ত চাকরিহারানো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ‘বেতন’ নিয়েও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ এপ্রিল: "তাকিয়ে আছি সুপ্রিম কোর্টের ১৭ এপ্রিলের শুনানির…

4 days ago

Midnapore: বিশ্বে তৃতীয়, ভারতে প্রথম! দু-দু’টি বিরল রোগাক্রান্ত সন্তোষকে নতুন জীবন দিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ এপ্রিল: একসঙ্গে দু-দুটি বিরল রোগ! দু-তিন বছর আগে…

6 days ago

Headmaster Recruitment: প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি পশ্চিম মেদিনীপুরে! শূন্যপদ প্রায় আড়াই হাজার

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ এপ্রিল: দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রাথমিকে প্রধান…

7 days ago