Health

Kharagpur SDH: “যেতে নাহি দিব!” প্রিয় সুপার-কে ‘ছাড়তে’ রাজি নয় রেলশহর; ভালোবাসায় আপ্লুত চিকিৎসক বললেন, “সুযোগ হলে আবার আসবো”

মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ এপ্রিল:”যেতে নাহি দিব! যেতে নাহি দিব। সবে কহে, যেতে নাহি দিব”! ‘কবিগুরু’র সুরেই (যেতে নাহি দিব/সোনার তরী) যেন বলে উঠতে চাইছেন আপামর খড়্গপুরবাসী! তাঁদের প্রিয় ডাক্তারবাবু’র উদ্দেশ্যে। হ্যাঁ, তিনি খড়্গপুর মহাকুমা হাসপাতালের সুপার (Superintendent) ডাঃ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। গত ৭ বছর ধরে ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরের মহাকুমা হাসপাতাল (Kharagpur Sub Divisional Hospital) পরিচালনা করে এসেছেন পরম আন্তরিকতার সাথে। মাঝখানে দু’বছর আবার (২০২০-‘২১) সামলেছেন অতিমারীর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি। সেই কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের-ই বদলি’র অর্ডার হয়েছে সম্প্রতি (১৭ মার্চ, ২০২২)। নতুন সুপার হিসেবে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের দায়িত্ব পেয়েছেন ডাঃ উত্তম মান্ডি। তিনি ছিলেন পড়শি জেলা (ঝাড়গ্রামের)’র বেলপাহাড়ির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH)। আর দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁকে সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে (চার্জ হ্যান্ডওভার) দিয়ে ডাঃ মুখোপাধ্যায়-কে রওনা দিতে হবে আলিপুরদুয়ারের উদ্দেশ্যে। বদলির নির্দেশিকা অনুযায়ী, তাঁর প্রোমোশন বা পদোন্নতি হয়েছে আলিপুরদুয়ারের উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (১) বা ডেপুটি সিএমওএইচ (Dy. CMOH 1) হিসেবে।‌ তবে, তার ঠিক ২-৩ দিন আগে থেকে নজিরবিহীন শোকের আবহ তৈরি হয়েছে খড়্গপুর মহাকুমা হাসপাতাল চত্বর জুড়ে। হাসপাতালের স্টাফ, নার্স, চিকিৎসক থেকে শুরু করে রোগী, রোগীর পরিজন; সর্বোপরি রেল শহর খড়্গপুরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন- তাঁদের প্রিয় এই স্বাস্থ্য আধিকারিককে (সুপারকে) ছাড়তে রাজি নয়। তাই, গত কয়েকদিন ধরে তাঁরা গণস্বাক্ষরের আয়োজন করেছিলেন খড়্গপুর মহাকুমা হাসপাতাল চত্বরে! সেই গণস্বাক্ষরের প্রতিলিপি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোও হয়েছে। কিন্তু, সব ইচ্ছে তো পূরণ হয়না! তাই, ডাঃ মুখোপাধ্যায়-কেও হয়তো দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই চলে যেত হবে বলে জানা গেছে।

গণ স্বাক্ষরের আয়োজন :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত সাত বছর আগে ডাঃ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় যখন খড়্গপুর মহাকুমা হাসপাতালের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন এই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের ভুরিভুরি অভিযোগ ছিল। ‘মিনি ইন্ডিয়া’ রূপে খ্যাত মিশ্র সংস্কৃতির এই খড়্গপুরের হাসপাতালে রোগীর চাপও ছিল প্রচুর। তুলনায় একাধিক পরিষেবা ছিল অপ্রতুল! তাই, সাধারণ দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে সামান্য জটিল অপারেশন হলেও রেফার করে দেওয়া হত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। ধীরে ধীরে সেই অভ্যেস থেকে মহকুমা হাসপাতাল-কে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন ডাঃ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। পরিষেবার মানোন্নয়নও হয়েছে। অতিমারীর সময় নিজে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও নজর রেখেছেন পরিষেবার দিকে। রাতবিরেতেও যে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যে কোনো পরিষেবার জন্য আবেদন করলে, বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। পরামর্শ দিয়েছেন সমাজ মাধ্যমে। সাংবাদিক থেকে সমাজকর্মী, ফোন ধরতে কখনও কুন্ঠাবোধ করেননি! সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা। আর, এখন তো খড়্গপুর মহাকুমা হাসপাতালে আইসিসিউ (ICCU) সেন্টার, ট্রমা সেন্টার, অক্সিজেন প্ল্যান্ট প্রভৃতিও হয়েছে। আর, এই সমস্ত কিছু যাঁর নেতৃত্বে হয়েছে, সেই প্রিয় কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়-কে কিছুতেই ছাড়তে রাজি নন তাঁরা। তবে, মঙ্গলবার দুপুরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা’র সঙ্গে এনিয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানিয়েছেন, “একজন চিকিৎসকের প্রতি এই ধরনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিঃসন্দেহে গর্বের। উনি খুব ভালো কাজ করেছেন আমরাও জানি। তবে, সরকারি নির্দেশিকাতো মানতেই হয়। ওনার বদলির অর্ডার করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন। এ নিয়ে পরবর্তী কোন নির্দেশিকা আমরা হাতে পাইনি। তাই, কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো তাঁকে চলে যেতে হবে।” আর, স্বয়ং ডাঃ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমি তো সরাসরি মানুষের চিকিৎসা করতে পারিনি, তবে, একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবেও যে এভাবে মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া যায়, তা ভাবলেই নিজেকে গর্বিত মনে হয়। চেষ্টা করেছি খড়্গপুরবাসীর পাশে থাকতে, সীমিত পরিসরে যতটুকু করা যায় করতে। আর, ওনারাও সর্বদা আমার পাশে থেকেছেন, আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। খড়্গপুরবাসীর ভালোবাসায় আমি আপ্লুত। ওনারা আমাকে রাখার জন্য চেষ্টা করেছেন। তবে, সব চেষ্টা সব সময় সফল হয় না। তাই, নির্দেশিকা মেনে দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতে হবে। নতুন সুপার ইতিমধ্যে, গতকাল (সোমবার) জয়েন করেও গেছেন। তবে, আবার যদি সুযোগ হয়, নিশ্চয়ই খড়্গপুরে ফিরে আসব!”

ডাঃ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় :

News Desk

Recent Posts

Midnapore: গান শুনিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে নববর্ষের সূচনা জেলা পুলিশের! মেদিনীপুরে অভিনব উদ্যোগ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ এপ্রিল: বছরভর নানা রূপে দেখা যায় পুলিশকে। কখনও…

1 day ago

Midnapore: বুধ থেকে ‘বিকল্প’ পথেই স্কুল সামলাবেন প্রধান শিক্ষকরা! সিদ্ধান্ত চাকরিহারানো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ‘বেতন’ নিয়েও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ এপ্রিল: "তাকিয়ে আছি সুপ্রিম কোর্টের ১৭ এপ্রিলের শুনানির…

2 days ago

Midnapore: বিশ্বে তৃতীয়, ভারতে প্রথম! দু-দু’টি বিরল রোগাক্রান্ত সন্তোষকে নতুন জীবন দিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ এপ্রিল: একসঙ্গে দু-দুটি বিরল রোগ! দু-তিন বছর আগে…

3 days ago

Headmaster Recruitment: প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি পশ্চিম মেদিনীপুরে! শূন্যপদ প্রায় আড়াই হাজার

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ এপ্রিল: দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রাথমিকে প্রধান…

4 days ago

Vidyasagar University: কদর বাড়ছে কর্পোরেট চাকরির, নামমাত্র খরচে সংক্ষিপ্ত কোর্সের সূচনা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ এপ্রিল: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ (MBA) পড়ানো হয় সেই…

6 days ago

Midnapore: ‘অযোগ্যদের বরখাস্ত করতে হবে!’ মেদিনীপুরে দাবি তুললেন যোগ্যরা, স্কুলমুখো হলেননা বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ এপ্রিল: অপেক্ষায় ছিলেন সহকর্মীরা। আশায় বুক বেঁধেছিলেন প্রধান…

1 week ago