মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ ডিসেম্বর: প্রায় দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ‘করোনা শূন্য’ জেলা হিসেবে রেকর্ড ধরে রাখার পর, গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্টে ২ জন করোনা আক্রান্তের (COVID Positive) সন্ধান মিলেছিল। তারপর থেকে আজ (২৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত জেলায় নতুন করে একজনও করোনা আক্রান্ত হননি বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার করোনা আক্রান্ত দুই প্রৌঢ়াই (৬৫ ঊর্ধ্ব) ‘রেল শহর’ খড়্গপুরের বাসিন্দা এবং রেল পরিবারের সদস্যা। তাঁদের মধ্যে একজন খড়্গপুর শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চ রোডের বাসিন্দা এবং অপরজন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুর কালীমন্দির এলাকার বাসিন্দা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মতে, দু’জনই কোভিড পজিটিভ হওয়ার আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একজন ফাইলেরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে খড়্গপুরের রেল হাসপাতালে এবং অপরজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই সূত্রেই কোনোভাবে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে, কোভিডের তেমন কোনো গুরুতর উপসর্গ তাঁদের শরীরে নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত মালঞ্চর বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধা, যিনি রেলের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন; তিনি এখনও পর্যন্ত করোনার কোনও টিকাই নেননি! পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার জন্যই টিকা দেওয়ার সুযোগ হয়নি।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) ডাঃ সারেঙ্গী বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে জানিয়েছেন, “জেলায় করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। গত চার দিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হননি কেউ। খড়্গপুরের দুই প্রৌঢ়াও দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে ভুগছিলেন। কোভিডের গুরুতর কোনো উপসর্গও নেই তাঁদের শরীরে। তা সত্ত্বেও আমরা পরিস্থিতির দিকে নজরে রেখেছি।” এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, রাজ্য থেকে নির্দেশিকা আসার পরই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তিনটি হাসপাতালকে কোভিড রোগীদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। হয়েছে মক ড্রিল-ও। মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে মক ড্রিল করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা। বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে মক ড্রিল হয়েছে। দু’জায়গাতেই উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। প্রয়োজনে শালবনী ও ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের করোনা পরিকাঠামোকেও ব্যবহার করা হবে বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তবে, এখনই তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও স্বাস্থ্যকর্তাদের মত।
অন্যদিকে, চীনে করোনা’র চোখরাঙানির পরই সতর্ক কেন্দ্র। রাজ্য তথা জেলাগুলিকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হচ্ছে করোনা’র প্রিকশানির ডোজ বা সতর্কতামূলক ডোজ (বুস্টার ডোজ)- এর উপর। এদিকে, রাজ্যে এই ডোজ নিতে ব্যাপক অনীহা বলে তথ্যে উঠে এসেছে। মাত্র ২৬ শতাংশ মানুষ এই ডোজ নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। অন্তত ৮৫ শতাংশ মানুষ এই ডোজ না নিলে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি হবেনা বলে মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে, রাজ্যে কোভিশিল্ড (Covishield) ডোজের ভাঁড়ার শূন্য! কোভ্যাক্সিন (Covaxin)-ও শেষ হয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের কাছে টিকা চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬ হাজার মতো কোভ্যাক্সিন আছে। কোভিশল্ড নেই। ১ লক্ষ কোভিশল্ড টিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী।