মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ মার্চ: রাজ্য জুড়ে অ্যাডিনো ভাইরাস (Adeno Virus) সংক্রমণের আবহে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও। এই মুহূর্তে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জেলার হাসপাতালগুলিতে ৭২ জন শিশু ভর্তি আছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ৩৮ (৩ জন আছে ICU তে) এবং ঘাটাল, ডেবরা, খড়্গপুর ও শালবনীতে যথাক্রমে- ১৭, ৬, ৬ ও ৫ জন শিশু চিকিৎসাধীন বলে জানা যায়। তবে, এর মধ্যেই কিছুটা স্বস্তির খবর এলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য ভবনে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সপ্তাহে মেদিনীপুর মেডিক্যালে অপেক্ষাকৃত সংকটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন যে ৫ শিশুর নমুনা পাঠানো হয়েছিল, তাদের সকলেরই অ্যাডিনো ভাইরাস রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এসেছে। তবে, অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা না পড়লেও ২ জন শিশু ‘প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-৩’- তে আক্রান্ত বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে। বাকিরা সকলেই সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল বলে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানান, “কলকাতা সহ কয়েকটি জেলায় অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ চিন্তা বাড়ালেও পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর এই রিপোর্ট। তবে, তা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য দপ্তর সতর্ক আছে। বাবা-মা’দেরও বলব, শিশুকে একটু সাবধানে রাখুন। নিজেরাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। জ্বর বা ঠান্ডা লাগলে বাইরে পাঠাবেন না। সামান্য বাড়াবাড়ি মনে করলেই হাসপাতালে নিয়ে আসুন। আর, অবশ্যই সকলে বারবার হাত ধোন এবং মাস্ক ব্যবহার করুন।” তিনি এও জানান, “খড়্গপুরের উর্জস্বতী রায়চৌধুরী ছাড়া জেলার কোন শিশুই এখনও পর্যন্ত অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তবে, ওর ক্ষেত্রে ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি’র জটিলতা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছিল। আমরা ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। একইসঙ্গে সকল অভিভাবকদের সচেতন থাকার আবেদন জানাই। তবে, মনে রাখবেন আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। স্বাস্থ্য দপ্তর সতর্ক আছে, আপনারাও সতর্ক থাকুন।” অন্যদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল ছাড়া জেলার কোন হাসপাতালেই পিকু ওয়ার্ড (Pediatrics Intensive Care Unit) না থাকার বিষয়ে তিনি জানান, “মেদিনীপুর মেডিক্যালে ২২৬টি শিশু শয্যার মধ্যে ১০২টি SNCU এবং ২৪টি PICU ওয়ার্ড আছে। ঘাটালে ২০টি SNCU আছে। খড়্গপুরে একটি পিকু ওয়ার্ড তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আপাততো আর কোথাও বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সাধারণ শয্যা বাড়ানো যেতে পারে। জেলায় সেই পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।” উল্লেখ্য যে, এই মুহূর্তে মেদিনীপুর মেডিক্যাল সহ ঘাটাল, খড়্গপুর, ডেবরা ও শালবনী মিলিয়ে শিশুদের জন্য ৩৬০-৩৭০টি শিশু শয্যা আছে। প্রয়োজনে তা ৪২০ পর্যন্ত করা যেতে পারে বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন। (প্রচ্ছদ/ফিচার ইমেজের ছবি প্রতীকী)