দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ ফেব্রুয়ারি: জন্মের পর থেকেই বিরল রোগে আক্রান্ত। নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারতো না উর্জস্বতী। তবে, মনের জোর আর বাবা-মা’র হার না লড়াইয়ের উপর ‘ভর’ করে প্রথমে ‘রাজ্য পুরস্কার’ এবং পরে ‘জাতীয় পুরস্কার’ জিতে নিয়েছিল ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি’ (Spinal Muscular Atrophy/SMA)-তে আক্রান্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের (খরিদা মিলন মন্দির এলাকার) কন্যা উর্জস্বতী রায়চৌধুরী। মজ্জার যে ‘বিরল’ রোগে দেশের মাত্র ২০০ জন ছেলেমেয়ে আক্রান্ত, সেই রোগে আক্রান্ত হয়েও বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের (Stephen Hawking) মতোই হুইলচেয়ারে বসে নিজের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল মেদিনীপুরের ‘ধন্যি মেয়ে’ উর্জস্বতী। সঙ্গীতের যাদুতে ২০১৮ সালে (৩ ডিসেম্বর) ‘জাতীয় পুরস্কার’-ও জিতেছে উর্জস্বতী। তবে, ‘বিজ্ঞানী’ হওয়ার সাধ তার অপূর্ণ’ই থেকে গেল! জটিল রোগের সাথে অ্যাডিনো ভাইরাসের (Adenoviruses) করাল গ্রাসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই ‘না ফেরার দেশে’ পাড়ি দিল খড়্গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur) চত্বরে অবস্থিত ডিএভি মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী এই ছাত্রী। বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। জেলায় অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণে এটিই প্রথম মৃত্যু বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। যদিও, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ওর। তবে, অ্যাডিনো ভাইরাসেই মৃত্যু কিনা, বিস্তারিত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে বলা সম্ভব নয়।”
এদিকে, মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সঙ্গীতে ‘জাতীয় পুরস্কার’ বিজয়িনী উর্জস্বতী’র বিদায়ে মন ভার খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুরের। গত ২৬ জানুয়ারি-ও খড়্গপুর ট্রাফিক গ্রাউন্ডে আয়োজিত প্রজাতন্ত্র দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে তিনটি দেশাত্মবোধক গান গেয়ে খড়্গপুর বাসীর মন জয় করেছিল উর্জস্বতী। জন্মের পর থেকেই স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (Spinal Muscular Atrophy)-তে আক্রান্ত উর্জস্বতী হুইলচেয়ারে বসেই একপ্রকার ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। বাবা উত্তীয় রায়চৌধুরী এবং মা লোপামুদ্রা রায়চৌধুরী’র প্রাণপন চেষ্টা আর নিজের অসীম সাহসে ভর করে উর্জস্বতী তার সমস্ত শারীরিক বাধা অতিক্রম করে ২০১৬ সালে সঙ্গীতে ‘রাজ্য পুরস্কার’ এবং ২০১৮’র ডিসেম্বর মাসে (৩ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের জন্য নির্ধারিত ‘সৃজনশীল শিশু পুরস্কার’ জিতে নিয়েছিল। তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু উর্জস্বতী’র হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন। সেই উর্জস্বতী বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, SMA-তে আক্রান্ত উর্জস্বতী অ্যাডিনো ভাইরাল নিউমোনিয়ার প্রকোপেও পড়েছিল। তার ফলেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জ্বরে আক্রান্ত উর্জস্বতী-কে কলকাতায় ভর্তি করেন বাব-মা। পেশায় বিদ্যুৎ দপ্তরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার বাবা উত্তীয় রায়চৌধুরী বুধবার সন্ধ্যায় খড়্গপুরের খরিদা শ্মশানঘাটে দাঁড়িয়ে বলেন, “এমনিতেই SMA -তে আক্রান্ত শিশুদের হার্ট, ফুসফুস সবকিছুই দুর্বল হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যে সুইজারল্যান্ড থেকে ওর ওষুধ আসত। লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিল ও। অতিমারী পর্বে বুকে আগলে রেখে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম। এবার আর সম্ভব হলোনা!” অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপে জ্বর থেকে ক্রমেই শ্বাসকষ্ট বাড়ে উর্জস্বতী’র। শেষ পর্যন্ত হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে যায় বুধবার সকাল সাড়ে আটটায়! পেশায় শিক্ষিকা মা লোপামুদ্রা রায়চৌধুরী, বাবা উত্তীয় রায়চৌধুরী’র আক্ষেপ, ৭২ লক্ষ টাকার ওই ওষুধ বা ১৬ কোটি টাকার একটি বিদেশি ইঞ্জেকশন (যা অবশ্য উর্জস্বতী পায়নি) যদি আরও সহজে এই ধরনের শিশুরা (SMA-তে আক্রান্ত শিশুরা) পেত, তাহলে অকালেই এদের হারাতে হতো না! এদিকে, এই মৃত্যু ঘিরেই জেলাজুড়ে নতুন করে ‘অ্যাডিনো ভাইরাস’ এর আতঙ্কও ছড়িয়েছে! যদিও, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানান, “অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ জেলায় নেই। তবে, এআরআই (Accute Respiratory Infection) বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ৪৯ জন শিশু এই মুহূর্তে মেদিনীপুর মেডিক্যাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে। এর মধ্যে, মাত্র ৪ জন শিশু মেডিক্যালের আইসিইউ (SNCU বা PICU)-তে আছে। আর, খড়্গপুরের উর্জস্বতী SMA-তে আক্রান্ত ছিল। তাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় কম ছিল। সেজন্যই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর চিকিৎসায় হয়তো সাড়া দিতে পারেনি! আমরা ওর পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে পেলে আরো বিস্তারিত বলতে পারব।”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…