মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ ডিসেম্বর: আজ (১ ডিসেম্বর) ‘বিশ্ব এইডস দিবস’ (World AIDS Day)। তার ঠিক প্রাক্কালে সতর্কতা ও সুস্থ জীবনযাপনের বার্তা দেওয়া হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে। আজ (বৃহস্পতিবার) দিনভর স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ ট্যাবলো সহ সুসজ্জিত পদযাত্রা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়েও সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে মারণ ব্যাধি AIDS সম্পর্কিত সঠিক তথ্য ও প্রতিরোধের বার্তা সমূহ। এ প্রসঙ্গেই উল্লেখ্য যে, অতিমারীর ২ বছরের তুলনায়, চলতি বছরে জেলায় সামান্য বেড়েছে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে এইডস (HIV Positive) ধরা পড়েছিল ১৩১ জনের। ২০২১ সালে এইডস আক্রান্ত হয়েছিলেন ১২৮ জন। অপরদিকে, চলতি বছরে এখনও অবধি পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ১৩৯ জনের। তবে, ২০১৮ এবং ২০১৯ এর তুলনায় সংক্রমণের হার অনেকটাই কম। ওই দু’বছরে এইডস আক্রান্ত হয়েছিলেন যথাক্রমে- ২৩৭ ও ২৬৬ জন। এই মুহূর্তে, পুরুষ, মহিলা এবং শিশু সহ জেলায় সবমিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার জন (৩০৬৮) এইডস সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আছেন বলেও জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী। উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই তালিকায় এই তালিকায় শিশুদের সংখ্যা ২৫৪, যারা আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। বাকি ২৮১৪ (পুরুষ ১৪১২, মহিলা ১৪০২) জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা। এর মধ্যে আবার কমবয়সী অর্থাৎ যুবক-যুবতীদের সংখ্যাও চোখ কপালে তোলার মতো বলেই জানা যায় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে।

thebengalpost.net
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ট্যাবলোর সামনে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী:

প্রসঙ্গত, এইডস (AIDS বা Acquired Immuno Deficiency Syndrome) নিজে কোনো রোগ না হলেও তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে। তাই, একে বাংলায় বলা হয়, অর্জিত প্রতিরক্ষা অভাবজনিত রোগ-লক্ষণ সমষ্টি। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটি হল- এইচ.আই.ভি. (HIV বা Human Immunodeficiency Virus)। বাংলায় একে ‘মানব প্রতিরক্ষা অভাব সৃষ্টিকারী ভাইরাস’ নামে চিহ্নিত করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত, অনিয়ন্ত্রিত যৌনজীবন বা যৌন সংসর্গ থেকে এই রোগ ছড়ায়। তবে, অনেকসময় ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ বা সুঁচ প্রভৃতি থেকেও ছড়ায়। এমনকি, এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুরও HIV রিপোর্ট পজিটিভ আসতে পারে। তবে, বর্তমানে এইডসের উন্নত মানের চিকিৎসা বা ওষুধপত্র বেরিয়ে যাওয়ার কারণে, মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহাকুমা হাসপাতাল এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এআরটি থেরাপি (ART Therapy বা Antiretroviral Therapy)’র মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলার CMOH। সঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন এবং নিজের লেখা ও সুর দেওয়া গানের মাধ্যমে এও তুলে ধরেছেন, “HIV পজিটিভের সাথে যৌন সংসর্গ করলে, এইচাইভি ভাইরাস যুক্ত রক্ত সঞ্চালন হলে, অশোধিত সিরিঞ্জের মাধ্যমে এইডস ছড়াতে পারে। এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করলে শিশুর রিপোর্ট পজিটিভ আসতে পারে। তাই, ৬ মাস ছাড়া ছাড়া তার রক্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।” তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, “এইডস রোগীর সঙ্গে একত্রে বসবাস করলে, একই থালা, বাসনপত্র বা কাপড় ব্যবহার করলে কিংবা একই পুকুরে বা জলাশয়ে স্নান করলেও এইডস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমনকি মশার কামড়ে কিংবা চুম্বনেও ছড়ায়না এই ভাইরাস!” বর্তমানে, সুচিকিৎসা‌ এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে একজন এইডস রোগী যে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্তা।

thebengalpost.net
এইডসের পদযাত্রা জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে: