মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জানুয়ারি: আবারও গান গাইলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী। এর আগে, এইডস, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া থেকে করোনা- পর্বে তাঁর গানই ছিল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সচেতনতা মূলক প্রচারের প্রধান হাতিয়ার। তবে, তিনি সেই সময় জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (Dy. CMOH 1) ছিলেন। এখন তিনিই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। এবারও গান গাইলেন। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের জন্য হাম-রুবেলা টিকাকরণ (MR Vaccination) কর্মসূচি উপলক্ষে। আজ, সোমবার (৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হল সেই কর্মসূচি। তার আগে গত কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে বাজলো মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্করের গান, “আমরা করব জয়…হাম-রুবেলা করব দূর, নিশ্চয়।” জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী জেলার ১১ লক্ষ ৬ হাজার ৬৪৪ জন ছেলে-মেয়েকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হাম-রুবেলা টিকা (Measles-Rubella Vaccine) দেওয়া হবে। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি (২০২৩) পর্যন্ত চলবে এই টিকাকরণ কর্মসূচি (Vaccination Programme)। সোমবার প্রথম দিন প্রতিটি ব্লকের বিভিন্ন স্কুল, SSK, MSK এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই টিকাকরণ কর্মসূচি সফলভাবে শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) ডাঃ সারেঙ্গী।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে ছাত্ররা :

উল্লেখ্য যে, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লি ছাড়া গোটা দেশের প্রায় ৩২ কোটি ছেলে-মেয়েকে ইতিমধ্যে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য‌ দপ্তর সূত্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)’ও জানিয়েছে হাম-রুবেলা’র এই অতিরিক্ত ডোজ (Additional Dose) এ কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া (Side effects) দেখা যায়নি। তাছাড়া, ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশু, কিশোর-কিশোরী’দের ক্ষেত্রে এই ভ্যাক্সিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। দেশ থেকে হাম-রুবেলা দূর করতে এই কর্মসূচি সফল করা প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে। প্রসঙ্গত, রুবেলা ভাইরাস (Rubella Virus), ‘জার্মান হাম’ হিসেবে পরিচিত হলেও, সাধারণ হাম (Measles)- এর তুলনায় অনেক বিপজ্জনক! প্রতি বছর ভারতের প্রায় ৫ হাজার শিশু এবং সারা বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। উপসর্গ (লাল ফুসকুড়ি, র‍্যাশ, জ্বর, মাথাব্যথা প্রভৃতি) প্রাথমিকভাবে সাধারণ হামের মতো মনে হলেও, একাধিক জটিল শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয় শিশুরা। বিশেষত, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে মায়েরা রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, গর্ভপাত হতে পারে অথবা শিশু জন্মগত রুবেলা সিনড্রোম বা সিআরএস (Congenital Rubella Syndrome) এ আক্রান্ত হতে পারে। আর, সেক্ষেত্রে শিশুর হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের সমস্যা, কানের সমস্যা (বধিরতা), চোখের সমস্যা (ছানি) হতে পারে।

তাই, ভ্যাকসিনেশন বা টিকাকরণের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে এদেশে তথা সার বিশ্বে। সাধারণত, দু’টি ডোজে (৯-১২ মাস এবং ১৬-২৪ মাস) শিশুদের মামস-মিজলস-রুবেলা বা এম এম আর (MMR) ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ আছে। তবে, সচেতন অভিভাবক (বাবা-মা)’রা ছাড়া অনেক সময়ই শিশুদের এই ভ্যাকসিন দিতে অবহেলা করা হয়। যা ভবিষ্যতে, বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতি করে! তাই, এবার স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের বাধ্যতামূলক ভাবে এই ভ্যাকসিন (Additional Dose) দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী সকল ছেলেমেয়েদের এই হাম-রুবেলা টিকা নেওয়া জরুরি। যে সকল শিশুরা তাদের রুটিন ভ্যাকসিনেশনে এমএমআর (MMR) নিয়েছে, তাদেরও এই অতিরিক্ত ডোজ (Additional Dose) দেওয়া যাবে। তবে, সেক্ষেত্রে ৪ মাসের (Four Months) ব্যবধান থাকলে ভালো। আর, যারা এম.এম.আর- এর কোনো ডোজই নেয়নি, সেই সকল শিশুদের অতি অবশ্যই এই এমআর ভ্যাকসিন (Measles-Rubella Vaccine) নিতে হবে। কারণ, রুবেলা ভাইরাসের সংক্রমণে সিআরএস (CRS- Congenital Rubella Syndrome) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর, সেক্ষেত্রে শিশুরা জটিল শারীরিক সমস্যায় ভোগে। তাই, গুটি বসন্ত, পোলিও’র মতো একেও গোড়া থেকে নির্মূল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী জেলার ১১ লক্ষ ৬ হাজার ৬৪৪ জন ছেলেমেয়েকেই আমরা সফলভাবে এই টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় আনতে পারব।”

thebengalpost.net
রেডক্রশে :

thebengalpost.net
শালবনীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে :