তনুপ ঘোষ ও মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জানুয়ারি: খড়্গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur)- তে সবেমাত্র অফলাইনে পড়াশোনার উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছিল। তবে, তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ল প্রযুক্তিবিদ্যার এই পীঠস্থানে! গত এক সপ্তাহে আইআইটি খড়্গপুর ক্যাম্পাসের শতাধিক আবাসিক করোনা সংক্রমিত হয়েছেন বলে সূত্রের খবর। এর মধ্যে, গত চারদিনে ৭৪ পড়ুয়া’র আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বছরের শেষ দিন ৩ জন এবং নতুন বছরের প্রথম তিন দিন যথাক্রমে ২৮ জন, ৩১ জন এবং ১২ জন (৩ জানুয়ারি দুপুর পর্যন্ত) পড়ুয়ার নমুনাতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে IIT খড়্গপুরের একটি সূত্রে জানা গেছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “আইআইটি খড়্গপুরের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো আছে এবং তাঁরা উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানতে পেরেছি। উদ্বেগের কিছু নেই। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে।” অন্যদিকে, জেলাজুড়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির আবহে শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল-কে পুনরায় সাধারণ হাসপাতাল থেকে করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা। যদিও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং যথেষ্ট সংখ্যায় স্বাস্থ্যকর্মী আছেন বলে জানিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। তিনি মঙ্গলবার সকালে জানিয়েছেন, “জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাওয়ার পরই আজ সকাল থেকে জেনারেল পেশেন্টদের গ্রামীণ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। এখন থেকে সেখানেই সাধারণ রোগীদের ভর্তি নেওয়া হবে। এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং চিকিৎসক আছেন দুই হাসপাতালেই। সুপার স্পেশালিটিতে চলতি সপ্তাহে আরও কয়েকজন চিকিৎসক যোগদান করতে পারেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানতে পেরেছি।” এছাড়াও, পুনরায় চালু হচ্ছে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি, ঘাটাল ও খড়্গপুরের করোনা ওয়ার্ডগুলিও‌। মেদিনীপুর মেডিক্যালে বাড়ছে করোনা শয্যা ও পিকু-নিকু ওয়ার্ড। জানিয়েছেন CMOH ডাঃ হাঁসদা।

thebengalpost.net
IIT Kharagpur :

অন্যদিকে, সারা রাজ্যের সাথে সাথে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলাতেও সোমবার (৩ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুলপড়ুয়াদের করোনার টিকাকরণ। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম এই দুই জেলাতেই এর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। জানা গেছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৫২ হাজার। এর মধ্যে, প্রথম দিন মোট ৯৪৬৪ জন পড়ুয়াকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ব্লক ও পৌরসভা মিলিয়ে। এমনটাই সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা। অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলার ৩১২৪ জন পড়ুয়াকে প্রথম দিন করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ প্রকাশ মৃধা। প্রথম দিন মেদিনীপুর শহরের রাধামাধব জীউ স্কুলে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার চেয়ারপারসন সৌমেন খান জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ভ্যাক্সিনেশন চলবে। শালবনী ব্লকের শালবনী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম দিন প্রায় ৮০০ পড়ুয়াকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। অন্যদিকে, চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের ক্ষীরপাই উচ্চ মাধ্যমিক মাল্টিপারপাস স্কুল সহ ব্লকের ১১০০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রথম দিন কোভ্যাক্সিন (Covaxin) দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন, চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের তিনটি জায়গায় টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

thebengalpost.net
ক্ষীরপাই উচ্চ বিদ্যালয়ে ভ্যাকসিনের জন্য পড়ুয়াদের আগমন :

অপরদিকে, সোমবার স্কুলে ভ্যাকসিন নিতে এসেছিল ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকরাও। তাঁরা দাবি তুলেছেন, “করোনা বিধি কঠোরভাবে পালন করে এবং সর্বাধিক ৫০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে স্কুলে পঠনপাঠন চালু করা হোক। নাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রভূত ক্ষতি হয়ে যাবে।” তাঁদের এও দাবি, “সবকিছুই যখন ৫০ শতাংশ নিয়ে হচ্ছে, তবে স্কুল গুলিও এভাবে চালু করা যেতে পারে। বিশেষত লোকাল ট্রেন, মেলা, খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবকিছুই যখন চালানো হচ্ছে, সেক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ করে কার স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে? বিভিন্ন গ্রামগুলি করোনা থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত আছে। সেখানেও অকারণে স্কুলগুলি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে! অথচ গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের কাছে, স্কুলের বিকল্প কিছু নেই। স্কুল শিক্ষকদের কোনো বিকল্প নেই তাদের কাছে”। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনও সেই দাবি তুলেছে ইতিমধ্যে। এখন দেখার, সরকারের কান অবধি এই দাবি পৌঁছয় কিনা!

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরের রাধামাধব জীউ স্কুলে হল পড়ুয়াদের ভ্যাকসিন :