thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যু ১ জনের :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ জানুয়ারি: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও গত কয়েকদিন হল আছড়ে পড়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুরে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বেড়ে হয়েছে ১২.১৮ শতাংশ। ২৬৬৭ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে, এর মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৩৩১ জনের (এর মধ্যে এই জেলার ৩২৫ জন)। গত চব্বিশ ঘণ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুরে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। তৃতীয় ঢেউ বা Third Wave আছড়ে পড়ার পর জেলায় এটাই প্রথম মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে! মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের ৬৪ বছর বয়সী এক প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। শনিবার গভীর রাতে (রাত্রি ২ টো নাগাদ, ঘড়ির কাঁটার হিসেবে রবিবার ভোররাতে) তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গেছে। এও জানা গেছে, শহরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার একাধিক কো মর্বিডিটি ছিল। ডায়াবেটিস বা সুগার এবং হৃদরোগও ছিল বলে জানা গেছে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। তার সঙ্গে করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হয় সম্প্রতি। জানা গেছে, শনিবার বিকেলের দিকে ওই বৃদ্ধার শারীরিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, পরিবারের লোকেরা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসেন। সন্ধ্যা নাগাদ তাঁকে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি! কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে, করোনা’র থেকেও কো-মর্বিডিটিগুলিকেই বেশি দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। তবে, এই ধরনের শারীরিক জটিলতা যুক্ত ব্যক্তিদের ‘সতর্ক’ও করছেন তাঁরা।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যু ১ জনের (প্রতীকী ছবি) :

কো-মর্বিডিটি বা নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সতর্ক করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “এটা খুব ভালো যে এই রোগের উপসর্গ এখন সাধারণ ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মত হয়ে গেছে। জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। মৃত্যুর হার বা হাসপাতালে ভর্তির হার নিঃসন্দেহে কম। তবে, এটুকু বলা যেতে পারে তা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আগামী কয়েকদিনে বৃদ্ধি পাবে। সারা দেশের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর হার খুব সামান্য হলেও বাড়ছে। কারণ টা হল, কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিরা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ধাকা ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার একটু বাড়বে। তাঁরা দ্রুত করোনার প্রিকশনারি ডোজ (Precautionary Doses) বা তৃতীয় ডোজ নিয়ে নিন এবং সতর্ক ও সাবধানে থাকুন।” একই কথা জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদাও। তাঁর মতে, “সংক্রমণ এখনো চূড়ায় পোঁছয়নি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা পৌঁছবে। তাই, সঠিকভাবে করোনা বিধি মেনে চলা উচিত। কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিরা অবশ্যই সাবধানে থাকুন। আজ থেকে জেলায় প্রিকশনারি ডোজ শুরু হচ্ছে। তাতে ৬০ বছরের উর্ধ্বে থাকা এবং কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিরা এই তৃতীয় ডোজের টিকা পাবেন। তবে, দ্বিতীয় ডোজের পর ৩৯ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে এই টিকা নেওয়া যাবে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজ, ১০ জানুয়ারি থেকে সারাদেশের সঙ্গে সঙ্গে এই জেলাতেও করোনা’র তৃতীয় ডোজ বা সতর্কতামূলক ডোজ (Precautionary Doses) দেওয়া শুরু হবে স্বাস্থ্য যোদ্ধা ও প্রথম শ্রেণীর করোনা যোদ্ধাদের। একইসঙ্গে, বিভিন্ন কো-মোর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিরাও এই টিকা নিতে পারবেন। তবে, দ্বিতীয় ডোজ হয়ে যাওয়ার ৩৯ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেই এই টিকা পাওয়া যাবে। যে সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ চলছে, সেখানে গেলেই এই টাকা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ হাঁসদা। অন্যদিকে এবারের উপসর্গ সম্বন্ধে, জেলার অন্যতম সুপরিচিত ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রবোধ পঞ্চাধ্যয়ী জানিয়েছেন, “সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। রিপোর্টে যা দেখছি তার অন্তত তিনগুণ। কারণ, বাড়িতে, বিভিন্ন চেম্বারে বিভিন্ন কিটের মাধ্যমে যাঁরা টেস্ট করাচ্ছেন, সেগুলো হয়তো স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে পৌঁছচ্ছে না! তবে, এবারের উপসর্গ অত্যন্ত সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি ও মাথা ব্যথার। তবে, গলা ব্যথার উপসর্গও আছে। কিন্তু, এই ওমিক্রণ ভেরিয়্যান্ট ফুসফুস অবধি পৌঁছতে পারছে না! তাই অক্সিজেন সাপোর্ট বা হসপিটালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। তবে, শারীরিক জটিলতায় ভোগা বা কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। একইসাথে বলব, সংক্রমণের গতিবিধি বুঝতে আগামী কয়েকদিন খুব গুরুত্বপূর্ণ।”