মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ এপ্রিল: এসেছিলেন কঠিন এক সময়ে। তাঁর পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতা দিয়ে সেই কঠিন পথ সহজেই অতিক্রম করেছিলেন শুধু নয়; আমূল বদলে দিয়েছিলেন গ্রামীণ চিকিৎসা পরিষেবার চিরাচরিত রূপটিকেও। তিনি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH) তথা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার (Superintendent) ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। সম্প্রতি তাঁর পদোন্নতি (Promotion) হয়েছে। শালবনী থেকে তিনি যাচ্ছেন ঝাড়গ্রামে। ইতিমধ্যে, অবশ্য ঝাড়গ্রাম জেলার অতিরিক্ত (বা, সহকারী) মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (ACMOH) হিসেবে যোগদানও করে গেছেন। পাকাপাকি ভাবে সেখানে পৌঁছে যাবেন দু’একদিনের মধ্যেই। তবে, তার আগে কর্মদ্যোগী, মানবিক এই স্বাস্থ্যকর্তা-কে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে হাসপাতালের কর্মীবৃন্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। রবিবার দুপুরে সাড়ম্বরে সংবর্ধনা জানানো হলো, আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহল’ এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ভঞ্জ মুলুকের পক্ষ থেকে। প্রিয় স্বাস্থ্যকর্তা-কে নিজেদের রীতি ও সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যময় উপকরণ পাঞ্চি ধুতি (বীরত্বের প্রতীক) পরিয়ে, ধামসা-মাদল বাজিয়ে এবং নানা স্মারক তুলে দিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হল।

thebengalpost.net
শালবনীতে সহকর্মীদের সঙ্গে ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস (ফাইল চিত্র) :

উল্লেখ্য যে, গত বছর (২০২১) জুন মাসে কোভিডের সবথেকে ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় ঢেউ (Second Wave) চলাকালীন শালবনী গ্রামীণ হাসপাতালের BMOH এবং শালবনী সুপার স্পেশালিটি (তৎকালীন, লেভেল ফোর করোনা হাসপাতাল) হাসপাতালের সুপার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। তাঁর কর্মতৎপরতায় একদিকে যেমন হাল ফিরেছিল গ্রামীণ হাসপাতালের, ঠিক তেমনই সঠিক এবং যথোপযুক্ত পরিষেবা দিতে সক্ষম হয়েছিল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও। এদিন, ভারত জাকাত মাঝি পরগণা মহলের পক্ষ থেকে দশরথ হেমব্রম যেমনটা বললেন, “করোনা কালে তিনি যেভাবে দিনরাত এক করে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, নিজে সংক্রমিত হয়েও পরিষেবা দিয়ে গেছেন তা এককথায় অনবদ্য। শুধু আমাদের এই সংগঠন নয়, যে কোন সংগঠন, সংস্থা’র পক্ষ থেকে যখনই তাঁর কাছে স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোন আবেদন নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তিনি তা আন্তরিকতার সঙ্গে রাখার চেষ্টা করেছেন। জঙ্গল ও জনজাতি অধ্যুষিত প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের এই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যেসমস্ত অপারেশন এতদিন হয়নি, তা হয়েছে। সর্বোপরি, সৌন্দর্যায়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপরও তিনি জোর দিয়েছেন। আমরাও একাধিকবার তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার করার কাজে হাত লাগিয়েছি। আজ, তাই বিদায়বেলায় এরকম একজন আধিকারিক-কে ছাড়তে কষ্ট হলেও, তাঁর আগামী পথযাত্রার প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে যথাসাধ্য এই আয়োজন করেছিলাম।”

thebengalpost.net
আদিবাসী সংগঠনের সঙ্গে ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস :

দশরথ বাবু’র এই কথা যেন শালবনীর প্রতিটি সাধারণ মানুষ কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিরও মনের কথা! আদিবাসী অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া থেকে শুরু করে ‘পরশ’ (অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা ব্যবস্থা) এর মানোন্নয়ন, সমস্ত কিছুতেই ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাসের অবদান অনস্বীকার্য বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও। একসময় (২০১৮-‘১৯) ঘাটালের বিদ্যাসাগর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (Vidyasagar BPHC)-কে যেভাবে ‘সুশ্রী’ প্রকল্পে রাজ্যসেরা করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই শালবনী হাসপাতালকেও সাজিয়ে তোলাই যে তাঁর লক্ষ্য ছিল, একথা বারবার জানিয়েছেন ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। তবে, পদন্নোতির কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁকে বদলি হয়ে যেতে হল বলে আক্ষেপও আছে ডাঃ বিশ্বাসের! এদিন তিনি জানিয়েছেন, “দীর্ঘ সময় (সাত বছর) ঘাটালের দায়িত্বে ছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম পরিষেবা সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছে দিতে! হয়তো অনেকটাই পেরেছিলাম। তবে, অতিমারী পরিস্থিতিতে শালবনীর দায়িত্ব পেয়েছিলাম। কাজটা খুব একটা সহজ ছিলনা। আমার সকল স্বাস্থ্যকর্মী তথা সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষকে যথাযথ পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হাসপাতালের ক্ষেত্রে পরিছন্নতা ও সৌন্দর্যায়ন একটা বড় বিষয়, সেটাও হচ্ছিল ধীরে ধীরে। তবে, সরকারি নিয়ম মেনে এবার ‘অরণ্য সুন্দরী’ ঝাড়গ্রামে যেতে হচ্ছে, ACMOH ছাড়াও একাধিক দায়িত্ব (DLO, DDO, Nodal Officer- Environmental Health প্রভৃতি) আছে। চেষ্টা করব আমার সর্বশক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালন করার।”

thebengalpost.net
দায়িত্ব নিতে চলেছেন ঝাড়গ্রামের ACMOH হিসেবে :