মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ অক্টোবর:’মঙ্গলে’ জন্ম, ‘দীপকে’ রক্ষা! খুশির হাওয়া দুই মেদিনীপুরে! ‘বিরল’ এই ঘটনাকে সংক্ষেপে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতেই পারে। মেদিনীপুর শহরের নামকরা স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মঙ্গল প্রসাদ মল্লিকের মাধ্যমেই পৃথিবীর আলো দেখে মাত্র ৭০০ গ্রামের দেবীপ্রসাদ। প্রায় এক মাস ধরে প্রাণপণ লড়াই করে (অবশ্যই চিকিৎসা শাস্ত্র মেনে) ছোট্ট দেবীপ্রসাদ-এর প্রাণ রক্ষা করেন মেদিনীপুর শহরের সুপরিচিত শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপক কুমার মাসান্ত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পূর্ব মেদিনীপুরের (ঠিকানা সূত্রে) দেবীপ্রসাদের জন্ম হয়, পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সোমবার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে মেদিনীপুর শহরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিজের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল ১ কেজি ৬৫ গ্রামের (জন্মের ৩৪ দিন পরের ওজন) দেবীপ্রসাদ। স্বভাবতই, দেবীপ্রসাদ-কে ঘিরে খুশির হাওয়া দুই মেদিনীপুরেই! বিরল নজির গড়ে আবারও একবার চিকিৎসাশাস্ত্রের জয়গান গাইলেন মেদিনীপুরের চিকিৎসকরা। বিশেষত, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপক কুমার মাসান্ত।
জানা গেল, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানার নিতুড়িয়ার দম্পতি বিভাকর পন্ডা ও যুথিকা পন্ডা। বিভাকর পেশায় কেরলের একটি কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার আর যুথিকা একটি ট্রেনিং কলেজের দিদিমণি। কিন্তু, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকেই নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন যুথিকা। মাত্র ৬ মাস গর্ভধারণ করার পর, গর্ভের জল শুকিয়ে যায় যুথিকার! দুই মেদিনীপুরের একাধিক চিকিৎসকের কাছে গেলেও, সিজার (C-Section/সিজারিয়ান অপারেশন) করার ঝুঁকি নেননি কেউই। অবশেষে, গত ৩৪ দিন আগে (২২ সেপ্টেম্বর) স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মঙ্গল প্রসাদ মল্লিকের অধীনে মেদিনীপুর শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে (রায় নার্সিংহোমে) যুথিকা ভর্তি হয়। ডাঃ মঙ্গল প্রসাদ মল্লিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, যুথিকা’র গর্ভে থাকা সন্তানের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক! এরপরই, ডাঃ মল্লিক সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত অস্ত্রোপচার (সিজার) করার বিষয়ে। ২২ সেপ্টেম্বর পুত্র সন্তানের জন্ম দেন যুথিকা। তবে, সদ্যজাত শিশুটির ওজন ছিল মাত্র ৭০০ গ্রাম! যার ফলে শুধু যুথিকা’র পরিবারেই নয়, উদ্বেগ দেখা দেয় চিকিৎসকদের মধ্যেও। পরিজনেরা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপক মাসান্ত’র দ্বারস্থ হন। ডাঃ মাসান্ত শিশুটির চিকিৎসা শুরু করেন। দীর্ঘ ৩৪ দিন শিশুটিকে ওই বেসরকারি বেসরকারি হাসপাতালের NICU তে রাখা হয়, ২৪ ঘন্টা নজরদারীর মধ্যে। অবশেষে, একটু একটু করে সুস্থ হতে শুরু করে শিশু’টি। সোমবার (২৫ অক্টোবর) ৩৪ দিনের মাথায় শিশু-টিকে তার মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হল! শিশুটির ওজন এই মুহূর্তে বেড়ে হয়েছে ১ কেজি ৬৫ গ্রাম। ছোট্ট দেবীপ্রসাদ-কে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় নিজেদের কাছে পেয়ে চোখে আনন্দাশ্রু ধরে রাখতে পারেননি বিভাকর ও যুথিকা! ছলছল চোখে তাঁরা বলেন, “ডাক্তারবাবু নন, উনি আমাদের কাছে ভগবান!” আর, দেবীপ্রসাদের কাছে সাক্ষাৎ দেবদূত রূপে উপস্থিত হওয়া ডাঃ দীপক মাসান্ত বললেন, “এটা হয়তো সত্যিই যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বর্তমান স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মধ্যে এত স্বল্প ওজনের ও সঙ্কটজনক সদ্যোজাতকে সুস্থ অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নজির প্রায় নেই বললেই চলে! তবে, এজন্য বেসরকারি এই হাসপাতালের উন্নত পরিকাঠামো যুক্ত NICU এবং সকল নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। সর্বোপরি, ঈশ্বরের কৃপা ছাড়া হয়তো এই অসম্ভব ‘সম্ভব’ হতো না!” পরিজনেরাও বললেন, “ডাক্তারবাবু’র চিকিৎসা আর ষষ্ঠী দেবীর আশীর্বাদ! তবেই, না আমাদের দেবীপ্রসাদ পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে পাড়ি দিতে পারছে!”