মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ আগস্ট: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন প্রকল্প সাধারণ মানুষের “দুয়ারে” পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলি এখনও সম্পূর্ণ ভাবে “দুয়ারে” পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি রাজ্য সরকারের পক্ষে! মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাতেই এবার সেই উদ্যোগ নিলেন শালবনীর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH) ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তাঁর ভাবনা, প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার স্পর্শে একটু একটু করে বদলাতে শুরু করেছে শালবনী গ্রামীণ হাসপাতালের (Salboni Rural Hospital) চিকিৎসা পরিষেবা তথা সমগ্র ব্লকের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। আবার, সুপার (Superintendent) হিসেবে শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের (Salboni Super Speciality Hospital) পরিষেবা-ও আরও অত্যাধুনিক ও উন্নত করে তুলতে তিনি বদ্ধপরিকর। পাহাড়প্রমাণ এই কর্মব্যস্ততা ও দায়িত্বের মধ্যেই তিনি স্বয়ং স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে পৌঁছে গেলেন, শালবনী ব্লকের দারিদ্র্য পীড়িত ও উপজাতি অধ্যুষিত গ্রাম বুড়িশোলে। অর্থাভাব ও শিক্ষার অভাবের সঙ্গেই, এই গ্রামের শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন সমস্যা এবং জটিল নানা রোগ-ব্যাধি নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই উল্লেখ করার মতোই। শালবনীর নতুন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কানে তা পৌঁছতেই, তিনি আর দেরি করলেন না! দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই, একপ্রকার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই তাঁর পুরো টিম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন প্রত্যন্ত এই বুড়িশোল গ্রামের উদ্দেশ্যে। গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে সচেতনতার বার্তা দেওয়াই নয়, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে তাঁদের অবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন এবং জটিল রোগ-ব্যাধির বিষয়গুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। সাধারণ কিছু ওষুধ পত্র যেমন দেওয়া হল, পরবর্তী চিকিৎসা পরিষেবার বিষয়টিও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানিয়ে দিলেন। এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথাও জানালেন তিনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পিছিয়ে পড়া ভূমিজ উপজাতি অধ্যুষিত বুড়িশোল গ্রামের (ভূঁইয়া পাড়া) বাসিন্দা দীনমজুর জয়দেব ভূঁইয়া ও দশমী ভূঁইয়া’র বছর তিনেকের কন্যা সৃষ্টি ছয় মাস বয়স থেকেই বিরল “নিউরো ফাইব্রো মেটোসিস (Neurofibromatosis) রোগে আক্রান্ত। পিঠের দিকে বড়সড় টিউমার হয়ে তা শরীর থেকে ঝুলছে এবং শরীরের প্রায় অর্ধেক অংশ কালো হয়ে গেছে। জেনেটিকাল ডিসঅর্ডারের ফলে অল্প বয়সেই বিশেষ ধরনের এই টিউমার হয় বলে জানা গেল। অপরদিকে, গ্রামের হিরণ ভূঁইয়া নামে বছর পাঁচেকের এক বালক বিরল হাইড্রো ক্যাফালাস (Hydrocephalus) রোগে আক্রান্ত। শিশু কাল থেকেই মস্তিষ্কের একটি অংশে জল জমে আছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও, ঝিলিক ভূঁইয়া সহ গ্রামের একাধিক শিশু ও কিশোরীরা বিকলাঙ্গ বা পঙ্গুত্ব (Crippled) নিয়ে বেঁচে আছে। নিতান্তই অসহায় ও দারিদ্র্য পীড়িত এই গ্রামের অভিভাবক-অভিভাবিকারা হয়তো সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা টুকুও সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি! তবে, একথাও নিশ্চিত, এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে কখনও কোনও স্বাস্থ্যকর্তা গিয়ে পৌঁছননি হয়তো। সৃষ্টি, ঝিলিকরা এভাবে কখনও পায়নি তাদের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের স্নেহস্পর্শ! বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে তাদের শারীরিক অবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। বাবা-মা’দের দিলেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলেন। সর্বোপরি দিলেন এভাবেই অন্যান্য গ্রামেও পৌঁছে যাওয়ার বার্তা। ডাঃ বিশ্বাসের সঙ্গে ছিলেন শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের অ্যাসিঃ সুপার ডাঃ সুজায়ুল আলম সহ অন্যান্য কয়েকজন আধিকারিক। ছিলেন এ এন এম এবং আশা কর্মীরাও। এছাড়াও, ছিলেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ। সকলকে পাশে নিয়ে ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস বললেন, “স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে কেবল ঠান্ডা ঘরে বসেই মানুষকে পরিষেবা দেওয়া নয়, প্রয়োজনে তাঁর বাড়ির উঠোনে গিয়ে প্রকৃত অবস্থা ও জীবনযাপন পর্যালোচনা করে সঠিক পরিষেবা টুকু পৌঁছে দেওয়াও আমাদের কর্তব্য। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের অনুপ্রেরণা। এই জেলার জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা যথাযথ পালন করে প্রত্যন্ত এই জঙ্গলমহল শালবনীর বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সকলকে নিয়ে সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি। ইতিমধ্যে গ্রামীণ ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরিকাঠামো গত আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সহযোগিতায় গ্রামে গ্রামে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্য শিবির করার কাজও আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে।”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২২ নভেম্বর: আইআইটি (IIT)-র মতো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে অভাব…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ নভেম্বর: দোকান বন্ধ করে রাতেই বেরিয়েছিলেন বাইক নিয়ে।…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…