মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি: কোডিডের থেকেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে শিশুদের উপর। ২ বছর পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হারও কোভিডের (Covid 19) থেকে অনেক বেশি! হ্যাঁ, কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে এই মুহূর্তে আতঙ্কের নাম অ্যাডিনো ভাইরাস (Adenoviruses)। প্রাথমিকভাবে উপসর্গ অনেকটাই কোভিড বা যেকোনো ভাইরাস সংক্রমিত জ্বরের মতোই। তবে, ৩-৪ দিন পর থেকেই তা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এই মুহূর্তে কলকাতার সমস্ত শিশু হাসপাতাল (বি.সি.রায় শিশু হাসপাতাল সহ) এবং বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের পিকু ওয়ার্ড (Pediatrics Intensive Care Unit/ PICU) গুলিতে তিল ধরানোর জায়গা নেই! স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, বেলেঘাটা আই.ডি’র আইসিইউ তেই বেড নেই। এখনও অবধি এই ভাইরাসের সব থেকে বেশি দাপট দেখা গিয়েছে- কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগণা, নদীয়া ও হুগলি জেলায়। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে একটি জরুরি বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছিল। ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব ডাঃ নারায়ণ স্বরূপ নিগম সহ অন্যান্য আমলা ও আধিকারিরাও। ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর সহ সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, সুপার এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। সেই বৈঠকেই পশ্চিম মেদিনীপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাকেই সতর্ক থাকার জন্য এবং জেলার হাসপাতাল গুলিকে প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে রবিবার জানা গেছে।
গতকালের বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তরফে ছিলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ মৌসুমী নন্দী, শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ সহ অন্যান্যরা। বৈঠক থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- শিশুদের (০-৫ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে) জ্বর যদি ৩ দিনের বেশি থাকে, তবে দ্রুত হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও, জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট থাকলে বা শিশুরা দ্রুত শ্বাস নিলেও চিকিৎসককের শরণাপন্ন হতে হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “কলকাতা সহ রাজ্য জুড়ে শিশুরা এই মুহূর্তে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা ARI (Accute Respiratory Infection)-তে ভুগছে। এজন্য, অ্যাডিনো ভাইরাসকে দায়ী করা হচ্ছে। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলাতে এই ভাইরাস শিশুদের উপর কোভিডের থেকেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।” তিনি এও জানান, “পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখনও অবধি এআরআই (ARI) বা গুরুতর শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রভাব তেমন পড়েনি। তবে, আজ থেকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সহ হাসপাতাল গুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ৫ বছর বয়স পর্যন্ত কতজন শিশু এই শ্বাসকষ্টের সমস্যা বা এআরআই (Accute Respiratory Infection) নিয়ে ভর্তি হচ্ছে, সেই তথ্য জেলা প্রশাসন বা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সহ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে সমস্ত ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু রোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ মনে করাচ্ছেন, “কোভিডের পর বিভিন্ন ভাইরাসের দাপট একটু বেড়েছে। এক-দেড় বছর আগে শিশুরা আর.এস ভাইরাসে (Respiratory Syncytial Virus) সংক্রমিত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। এই মুহূর্তে, অ্যাডিনো ভাইরাসকে দায়ী করা হচ্ছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। তাদের অক্সিজেন, ইনহেলার বা নেবুলাইজার প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এজন্য, সঠিকভাবে কোন ভাইরাস দায়ী, তা আমরা এখনও নিশ্চিত হইনি। তবে, এই ধরনের ভাইরাসগুলি সরাসরি ফুসফুস বা রেস্পিরাটরি সিস্টেমের উপর আঘাত হানছে। এই বিষয়ে খড়্গপুর আইআইটি’র সঙ্গে আমাদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তরফে পুনরায় যৌথ গবেষণা করা যায় কিনা, তা নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করেছি।” ডাঃ ঘোষ এও জানিয়েছেন, “আজ, রবিবার দুপুরের হিসেব অনুযায়ী পিকু’তে ভর্তি আছে ৮৬ জন। এর মধ্যে, ARI বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে ২০ জনের।” জেলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, “শুধু ছোটোদের নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও এই মুহূর্তে কাশি ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ বেড়েছে। তবে, ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে একটু সচেতন ভাবে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। যদিও, হার্টের সমস্যা সহ বড় কোন কো-মর্বিডিটি না থাকলে মৃত্যু ভয় নেই।” এদিকে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, শিশু সহ বড়দের পুনরায় মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “কফ, সর্দি বা থুতু থেকে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, সাবান বা হ্যান্ড ওয়াশ আগের মতোই ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। শিশুদের সাবধানে রাখুন। জ্বর, সর্দি, কাশি হলে বাইরে বা ভিড়ের মধ্যে না পাঠানোই ভালো। মাস্ক ব্যবহার করুন।”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ নভেম্বর: দোকান বন্ধ করে রাতেই বেরিয়েছিলেন বাইক নিয়ে।…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…