তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: দেবী পক্ষের প্রাক্কালে এ এক অন্য দুর্গার কাহিনী! বিষ মদ খেয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন স্বামী। এলাকার কত কম বয়সী যুবক হারিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে পৃথিবীর বুক থেকে! তাই, রুখে দাঁড়ালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দুর্গা। নিজের গ্রামে চোলাই মদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এলাকায় তিনিই এখন সাক্ষাৎ দেবী! নিজের গ্রাম থেকে বিষ মদের ব্যবসা বন্ধ করতে এলাকার মহিলাদের নিয়ে একটি প্রমীলা বাহিনী গঠন করেন দুর্গা মালিক। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে দুর্গার তৈরি ‘প্রমীলা বাহিনী’ই এলাকা থেকে বিষ মদের কারবার পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। ঘাটাল ব্লকের মনোহরপুর ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের দাবি, একসময় এলাকার বহু মানুষই এই বিষ মদ কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিষ মদ কারবারের জেরে এলাকার অনেক যুবক অকালে প্রাণ হারিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও প্রশাসন এই বিষ মদের কারবার বন্ধ করতে পারেনি। এলাকারই এক গৃহবধূ দুর্গা মালিক প্রথম এই বিষ মদ কারবারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
এলাকার প্রায় ৫০ জন মহিলাকে নিয়ে তৈরি করেন প্রমীলা বাহিনী। প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যে পালা করে লাঠি হাতে গ্রামে টহল দিতেন এই প্রমিলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রথমদিকে এই বিষ মদ কারবার বন্ধ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, এই প্রমীলা বাহিনীকে। পরবর্তীতে প্রশাসনের সাহায্যে মনোহরপুর এলাকা থেকে বিষ মদের কারবার বন্ধ করতে সক্ষম হয় এই প্রমিলাবাহিনীর সদস্যরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন দুর্গা মালিক। প্রসঙ্গত, দুর্গা দেবীর স্বামী খুব কম বয়সে মারা যান, চোলাইয়ের নেশায় ডুব দিয়ে! এরপর, সংসারের হাল ধরতে বাজারে তিনি মাছের ব্যবসা শুরু করেন। সাথে বিষ মদ বন্ধের জন্য গ্রামের মহিলাদের সংগঠিত করে তৈরি করেন প্রমীলা বাহিনী। ৫০ জন মহিলাকে নিয়ে এই প্রমীনা বাহিনী গঠিত হয়। প্রমীলা বাহিনীর নজরদারিতে বন্ধ হয় চোলাই মদের কারবার। শুক্রবার দুর্গা মালিক জানালেন, অন্যান্য যেসমস্ত এলাকায় চোলাই মদের ব্যবসা রয়েছে, সেখানকার মহিলারাও এভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে এই চোলাই মোদের বিরুদ্ধে অভিযান করে এলাকা থেকে চোলাই মদের ব্যবসা বন্ধ করুন। প্রয়োজনে তিনিও তাঁর বাহিনীকে নিয়ে পৌঁছে যাবেন সেই এলাকাতে।
অন্যদিকে, চোলাই বন্ধ করতে নজিরবিহীন এক বিজ্ঞপ্তি পড়লো ঘাটালের পাশেই দাসপুরে। বিজ্ঞপ্তি-তে লেখা, বিক্রেতার ১০,০০১ এক টাকা; ক্রেতার ৫০০১ টাকা আর ব্যানার ছিঁড়লে ৫০০১ টাকা জরিমানা! চোলাই মদ বন্ধ করতে এমনই জরিমানার নিদান চালু হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা দাসপুর থানার বালকরাউত গ্রামে। বৃহস্পতিবার সকালে বালকরাউত গ্রামে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, গ্রামের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ফ্লেক্স লাগানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে। বালকরাউত হাটতলা স্কুল লাগোয়া এলাকা সহ কিছু জনবহুল এলাকায় লাগানো হয়েছে ফ্লেক্স-ব্যানার। আর তাতে লেখা রয়েছে, জনসাধারণকে জানানো যাইতেছে যে- প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে মদ বিক্রি করলে বিক্রেতার ১০,০০১ টাকা এবং ক্রেতার ৫,০০১ টাকা জরিমানা করা হবে। এমনকি কেউ যদি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে তাহলে তারও ৫,০০১ টাকা জরিমানা করা হবে। নির্দেশ অনুসারে বালকরাউত মদ হাটাও মঞ্চ। গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে জানতে পারা যায় বেশ কয়েক বছর ধরেই বালকরাউত গ্রামে দেশি-বিদেশি মদের রমরমা ব্যবসা চলছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মদে আসক্ত হয়ে পডেছিল গ্রামের যুবক থেকে শুরু করে বয়স্করা। চায়ের দোকান, ভুষিমাল দোকান, সবজি দোকানেও মদ পাওয়া যেত। অতিষ্ট হয়ে হয়ে উঠেছিলেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা। মদ খাওয়ার ফলেই অসামাজিক কর্ম বেড়ে চলছিল এলাকায়। আর, সেই মদের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ করতেই গ্রামবাসীরা মিটিং করে বালকরাউত মদ হাটাও মঞ্চ গড়ে নজরদারি শুরু করেছেন এলাকায়। গ্রামবাসীদের দাবি ইতিমধ্যে কয়েকজনের জরিমানা করা হয়েছে। প্রশাসন উদ্যোগ না নিলেও, তাঁদের এই উদ্যোগে এলাকা এখন মদ-মুক্ত নির্মল সুন্দর!
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২২ নভেম্বর: আইআইটি (IIT)-র মতো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে অভাব…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ নভেম্বর: দোকান বন্ধ করে রাতেই বেরিয়েছিলেন বাইক নিয়ে।…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…