দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৮ জুলাই: ভোররাতে কোনভাবে আগুন লেগেছিল বাজারের মধ্যে থাকা মিষ্টি দোকানের ভেতরে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলার পরই আশেপাশের বাড়ির সকলের ঘুম ভেঙে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন সকলেই। আর সেই সময়ই ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মুহূর্তের মধ্যে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৮ বছরের নাবালকের দেহ! ভষ্মীভূত হয়ে যায় আশেপাশের পাঁচ-ছ’টি দোকানও। বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা নাগাদ মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের গেটবাজারে। মৃত নাবালকের নাম প্রভাস রানা (৮)। তার বাবার নাম বাপন রানা। মা বর্ণালী সিংহ (রানা)। প্রভাস স্থানীয় রাঙামাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র বলে জানা গেছে। ভোর ৪-টা নাগাদ তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনা ঘিরে জেলা শহরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া! ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

thebengalpost.net
ভষ্মীভূত সবকিছুই:

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর তিনটা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের গেটবাজারের ভেতরে থাকা একটি মিষ্টি দোকানে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রাও তেমনটাই দাবি করেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছুটে বেরিয়ে আসেন মিষ্টি দোকানের আশেপাশে থাকা বাড়ির লোকজন। ভোর সাড়ে তিনটা নাগাদ হঠাৎই মিষ্টি দোকানের ভেতরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিকট শব্দে ফেটে যায়! ‘নিরাপদ’ দূরত্বে না দাঁড়ানোর ফলে, সিলিন্ডারের কিছু অংশ ছিটকে এসে নাবালকের দেহে বিপজ্জনকভাবে আঘাত করে। তাতেই ছোট্ট প্রভাসের দেহ প্রায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়! আগুনও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভষ্মীভূত হয়ে যায় মিষ্টি দোকান সংলগ্ন আরও ৫-৬টি দোকান। খবর পেয়ে ভোর ৪-টা নাগাদ দমকলের ৩টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। যদিও, ততক্ষণে সব শেষ!

thebengalpost.net
ঘটনাস্থলে চাঞ্চল্য:

এদিকে, নাবালকের দেহ উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত নাবালকের জেঠিমা মঞ্জু রানা জানান, “আমরা বড়রা ছুটে পালিয়ে গেলেও, ও আগুন দেখার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। সেই সময়ই গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে গিয়ে ওর মৃত্যু হয়।” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে দাঁড়িয়ে নাবালকের এক কাকু বলেন, “ও ঠাকুমার হাত ছাড়িয়ে ছুটে দোকানের কাছে চলে যাওয়াতেই এই দুর্ঘটনা!” যদিও, প্রভাসের ঠাকুমা বলেন, “ওর দাদুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আগুন দেখছিল। হঠাৎই সিলিন্ডারের একটা অংশ ছিটকে এসে ওর দাদুর হাতে লাগে, আর ওর পেটে লাগে! ওর দাদু পড়ে যায়। আর ওর শরীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল!” জানা যায়, পেশায় শ্রমিক, বছর ২৮-র বাপন রানার বড় ছেলে প্রভাস। বছর দুয়েকের আরও এক ছেলে আছে। শোকস্তব্ধ বাপন বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, “আমি কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। ভোর চারটা নাগাদ ফোন পেয়ে ছুটে এসে দেখি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এসে শুনলাম ওর দাদুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে দূর থেকে আগুন দেখছিল। একটা টুকরো ছিটকে আসে। তাতেই সব শেষ!” বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গেই নাবালকের দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। ঘটনা ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শোকের ছায়া জেলা শহরে! (ছবি- অর্ণব।)

thebengalpost.net
ধ্বংসস্তূপে: