Festival

Midnapore Kalipuja: দেবীর স্বপ্নাদেশে নূপুরের শব্দ কিংবা শ্মশানে মন্দির প্রতিষ্ঠা! ঐতিহাসিক মেদিনীপুরের ঐতিহ্যমণ্ডিত কালী পুজো

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ অক্টোবর: দুর্গা, লক্ষ্মীর পর শ্যামা রূপে দেবীর আবির্ভাব। ইতিহাস আর স্বাধীনতা সংগ্রামের শহর মেদিনীপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কালী মন্দিরগুলিতে এখন সাজো সাজো রব। শতবর্ষ প্রাচীন মন্দির আর দেবীর প্রতিষ্ঠা ঘিরে ছড়িয়ে আছে নানা কাহিনী কিংবা কিংবদন্তি! রীতি মেনে মন্দিরগুলিতে পুজো হয়ে আসছে আজও। মেদিনীপুর শহরের লছি পোদ্দার কালীবাড়ি থেকে হবিবপুরের সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, বটতলায় দক্ষিণা কালীমন্দির কিংবা মীরবাজার কাঁথকালী মন্দিরের মতো একাধিক জায়গায় পুজোর প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। করোনার কারণে বিগত দু’বছর পুজোর জাঁকজমকে কাটছাঁট করা হলেও, এবার মহা সাড়ম্বরে আয়োজন করা হয়েছে পুজোর।

লছি পোদ্দার:

মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের লছি পোদ্দার বাড়ির কালী পুজো জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজো হিসাবেই পরিচিত। প্রায় চারশো বছরের পুরনো এই পুজো জেলাবাসীর মনে প্রাণে জায়গা করে নিয়েছে। কথিত আছে, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী নারায়ণ দে একদিন দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। দিন কয়েক পরেই মধ্যরাতে লক্ষ্মী নারায়ণ দে’র কানে ভেসে আসে নূপুর পরিহিতা মহিলার বাড়ির মধ্যে বিচরণের শব্দ। স্বপ্নাদেশে বলা হয়, নূপুরের শব্দ যেখানে গিয়ে বন্ধ হবে, সেখানেই মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই আদেশ অনুয়ায়ী সূচনা হয় এই বাড়ির কালী পূজার। তবে, লছি পোদ্দার নাম হয় লক্ষ্মী নারায়ণ দে’র নামের অংশ থেকেই। শোনা যায় লক্ষ্মী থেকে লছমি হয়ে লছি (বা, লচি)। যেহেতু তিনি পোদ্দারি করতেন, তার থেকে পুজোর নাম হয় লছি পোদ্দার (বা, লচি পোদ্দার) বাড়ির পুজো। একটি অবিবাহিতা মেয়ের সারা বছরের ভোজনের পরিমাণ স্বরূপ ১০৮ কেজি চাল উৎসর্গ করা হয় দেবীর উদ্দেশ্য। এই বাড়ির পুজোর নিরঞ্জন দেখতে মুখিয়ে থাকেন শহরবাসী। পুরানো প্রথা অনুযায়ী আজও গরুর গাড়িতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।

লছি পোদ্দারের দেবী মূর্তি:

মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পেছনেও ইতিহাস রয়েছে। কালীমন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনন্দন দীর্ঘাঙ্গি নামে এক বৈষ্ণব সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে অষ্টধাতুর বামকালীর বিগ্রহ তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন হবিবপুর ছিল জঙ্গলে ভর্তি। এই এলাকায় শ্মশান ছিল। তিনি বৈষ্ণব হওয়ায় মায়ের বিগ্রহ পুজোর জন্য কালিকারঞ্জন মহারাজ নামে একজনকে পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। শবের উপর মায়ের বিগ্রহের পুজো হত। আনুমানিক ৫৩৮ বছর আগে এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বলে দাবি বর্তমান সেবাইতদের। পুরানো ঐতিহ্য মেনেই পুজো হয়ে আসছে আজও।

Advertisement:

অন্যদিকে, মীরবাজার কাঁথকালী বিগ্রহ চারশো-সাড়ে চারশো বছরের পুরানো। কথিত আছে, ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় স্বপ্নাদেশ এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যদিও প্রথমে তিনি এসে বিগ্রহ খুঁজে পাননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি বটগাছের পাশে দেওয়াল ভেঙে স্বস্তিকচিহ্ন দেখেন। পরে, মায়ের বিগ্রহের হদিশ পান। সেই সময় তিনি টিনের চালের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পুরানো রীতি মেনেই আজও মন্দিরে পুজো করা হয়। নিয়ম করে ফি বছর মায়ের জন্য দু’কুইন্টাল চালের ভোগ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। বটতলাচকের দক্ষিণাকালী মন্দিরের সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। কথিত আছে, এক তান্ত্রিক সাধু নীলাচলে যাওয়ার পথে গাছগাছালিতে ভরা বটতলা চকে আশ্রয় নেন। তিনি টিনের চালা দেওয়া ঘরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে, বর্তমান মন্দির তৈরি হয়। প্রতি মঙ্গল ও শনিবার দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত মনোস্কামনা পূরণের জন্য এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। এখনও পুরনো ঐতিহ্য মেনে কালীপুজোর সময় ছাগবলি হয়। পুজোর পরদিন অন্নকূট উৎসব হয়।

বটতলা চকের কালী মন্দির:

Advertisement:

News Desk

Recent Posts

Midnapore: বিশ্বে তৃতীয়, ভারতে প্রথম! দু-দু’টি বিরল রোগাক্রান্ত সন্তোষকে নতুন জীবন দিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ এপ্রিল: একসঙ্গে দু-দুটি বিরল রোগ! দু-তিন বছর আগে…

5 hours ago

Headmaster Recruitment: প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি পশ্চিম মেদিনীপুরে! শূন্যপদ প্রায় আড়াই হাজার

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ এপ্রিল: দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রাথমিকে প্রধান…

1 day ago

Vidyasagar University: কদর বাড়ছে কর্পোরেট চাকরির, নামমাত্র খরচে সংক্ষিপ্ত কোর্সের সূচনা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ এপ্রিল: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ (MBA) পড়ানো হয় সেই…

3 days ago

Midnapore: ‘অযোগ্যদের বরখাস্ত করতে হবে!’ মেদিনীপুরে দাবি তুললেন যোগ্যরা, স্কুলমুখো হলেননা বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ এপ্রিল: অপেক্ষায় ছিলেন সহকর্মীরা। আশায় বুক বেঁধেছিলেন প্রধান…

5 days ago

Midnapore: “আবার বিপ্লব হবে!” মেদিনীপুরের মাটি ছুঁয়ে শপথ চাকরিহারা শিক্ষকদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ এপ্রিল: "আমি যদি অযোগ্য হই...যান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে…

1 week ago

Midnapore: কোনো স্কুলে ৮ জন, কোনো স্কুলে ৬ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল! “গ্রামের স্কুলগুলো শেষ হয়ে গেল”, আর্তনাদ মেদিনীপুরের প্রধান শিক্ষকদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ এপ্রিল: সুপ্রিম রায়ে রাজ্যে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর…

1 week ago