দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর: জঙ্গলমহলে মাও-আতঙ্ক একসময় স্থানীয়দের রোজকার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। আর, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল অধ্যুষিত শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা যেন হয়ে উঠেছিল মাও আঁতুড়ঘর! সকাল থেকে রাত, মাও-আতঙ্ককে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকতেন সেখানকার মানুষজন। প্রায় নিত্যদিনই শোনা যেত গুলির শব্দ। বাতাসে সমসময় মিশে থাকত বারুদের গন্ধ। নিরীহ মানুষজনদের তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন কিংবা ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও নেহাত কম ঘটেনি! গামছায় মুখ ঢেকে এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছিল মাওবাদীরা। অন্যদিকে, যৌথবাহিনীর ভারি বুটের ঠকাঠক শব্দ! কাঁধে ঝোলানো ইনসাস রাইফেল (Insas Rifle)। পরবর্তী সময়ে আবার এলাকার ত্রাস হয়ে পৌঁছে গিয়েছিল হার্মাদরাও! সবমিলিয়ে, ২০১০ সাল অবধি মানুষের জীবন থেকে কার্যত মুছে গিয়েছিল উৎসবের আনন্দ! সেই পিড়াকাটাতেই এই প্রথম হতে চলেছে বিগ বাজেটের দুর্গাপুজো। পুজোর পরিচালনায় রয়েছে পিড়াকাটা বাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি। প্রায় ২৩-লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে দুর্গা প্রতিমা ও মণ্ডপ। ঠাকুর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন একসময় মাও-আতঙ্কে থাকা পিড়াকাটা তথা জঙ্গল অধ্যুষিত শালবনী ব্লকের বাসিন্দারা।
একসময়, দুর্গাপুজোয় দলবেঁধে ঠাকুর দেখতে যাওয়া ভুলতে বসেছিল এই সমস্ত এলাকার মানুষ। কিন্তু, পালাবদলের পর পিড়াকাটা আর আগের অবস্থায় নেই। এখন বারুদের গন্ধ দুরস্ত, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়নি পিড়াকাটায়। যাদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ মুছে গিয়েছিল একসময়, তারাই ফের নতুন করে উৎসবে মেতে উঠবে এই দুর্গাপুজোয়। প্রসঙ্গত, জঙ্গলমহল শালবনী ব্লকের পিড়াকাটায় আদি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে, তবে পালাবদলের পর গত কয়েক বছর আরও একটি পুজো হচ্ছে বাজার কমিটির উদ্যোগে। পাঁচ বছরে পা দিল পিড়াকাটা বাজার কমিটির এই দুর্গাপুজো। কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার সাউ। সম্পাদক সমিত দাস। করোনা কারণে গত দু’বছর সেইভাবে দুর্গাপুজোয় মেতে উঠতে পারেনি এখানকার মানুষজন। কিন্তু, এবছর প্রত্যেকের মধ্যেই উৎসাহ তুঙ্গে।
গত দু’মাস আগে থেকেই প্রায় ৩৫ যান শ্রমিককে নিয়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন বেলদার শিল্পী পবন দে। সম্পূর্ণ কাঁচ ও ঝিনুক দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুজো মণ্ডপ। সামনে দেখে দেখলে মনে হবে যেন একটি ময়ূর পেখম মেলে রয়েছে। কাঁচ দিয়েই তৈরি হচ্ছে মায়ের প্রতিমা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বৃহস্পতিবার অর্থাৎ চতুর্থীর দিন বিকেলে বিধায়ক জুন মালিয়া’ও যাবেন। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত টানা পাঁচদিন ধরে থাকছে বিচিত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ষষ্ঠীর দিন বস্ত্র বিতরণের সঙ্গে থাকছে রক্তদান শিবির। নবমীর দিন প্রায় সাত হাজার মানুষের জন্য খাওয়াদাওয়ার আয়োজন থাকছে। সর্বোপরি, প্যান্ডেল জুড়ে দেওয়া হয়েছে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সহ স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য পরিমল ধল বলেন, “বাজারের প্রায় সমস্ত ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছি। জঙ্গল অধ্যুষিত এই এলাকায় এই ধরনের বিগ বাজেটের পুজো এই প্রথম হতে চলেছে। সকলকে সাদর আমন্ত্রণ জানাই!”