দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জুন:অতিমারী পর্বে বিগত দু’বছর রথ যাত্রার আনন্দ অনেকটাই ম্লান ছিল। এবার তাই, মহানন্দে রথযাত্রায় মেতে ওঠার প্রস্তুতি নিয়েছেন উৎসব প্রিয় মেদিনীপুরবাসী। আজ, মঙ্গলবার (১৪ জুন), তাই সাড়ম্বরে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হলো মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথ মন্দির এবং মেদিনীপুর গ্রামীণের খয়রুল্লাচকে। উল্লেখ্য যে, জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা সুপ্রসিদ্ধ ও সুপ্রাচীন হলেও, মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে, সদর ব্লকের খয়রুল্লাচক এলাকায় এবার-ই প্রথম রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। আর, প্রথম বছরের এই রথযাত্রা উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে তাই এলাকাবাসী আয়োজনে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি। স্নান যাত্রার আগের দিন (সোমবার) বিকেলে এক বিশাল ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় এলাকার ১০৮ জন মহিলা ভরা কলসি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। সেই সঙ্গেই হরিনাম সংকীর্তন, আদিবাসী নৃত্য, ধামসা বাদল, রণ-পা সহ বিভিন্ন প্রকার ট্যাবলো সহযোগে এই সুসজ্জিত শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। আর, আজ, মঙ্গলবার-ও সাড়ম্বরে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হল। ১০৮ জন মহিলা নদী থেকে কলসিতে করে জল নিয়ে যান। এরপর, আচার ও রীতি মেনে জগন্নাথ দেবকে স্নান করানো হয়। জানিয়েছেন, উৎসব কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ কর্মকার।
অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরের জগন্নাথ মন্দির এলাকার অবস্থিত প্রভু জগন্নাথ মন্দিরে, ৭ টি সুবিশাল কলসে করে (৭ সমুদ্রের প্রতীকী) জল নিয়ে এসে মন্দিরের পুরোহিতরা স্নান করালেন জগন্নাথ দেব, বলরাম দেব ও মাতা সুভদ্রা’কে। উল্লেখ্য যে, স্নানযাত্রা হল হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে আয়োজিত একটি উৎসব। হিন্দু দেবতা জগন্নাথের ভক্তদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনটিকে জগন্নাথের জন্মতিথি মনে করা হয়। পুরীতে স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহন বিগ্রহকে জগন্নাথ মন্দির থেকে স্নানবেদীতে বের করে আনা হয়। সেখানে তাদের প্রথাগতভাবে স্নান করানো হয় এবং ভক্তদের দর্শনের জন্য সুন্দর বেশভূষায় সজ্জিত করা হয়। কথিত আছে, জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর যজ্ঞের প্রভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন প্রভু জগন্নাথ। তারপর এই পূণ্যতিথিটিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন মনু। সেই জন্মদিন উপলক্ষে, পৌরাণিক কাল থেকে এই বিশেষ স্নান উৎসব পালিত হয়ে আসছে আজও। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম পূর্ণিমাতেই জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। এদিন গর্ভগৃহ থেকে মূর্তি তুলে এনে স্নান মণ্ডপে স্থাপন করা হয়। সেখানেই সুগন্ধি জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা-কে। স্নানের পাশাপাশি চলে মূর্তির সাজসজ্জা-অলঙ্করণ ইত্যাদি। ১০৮ ঘড়া জলে স্নানের পরেই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। তাই, এইসময় গৃহবন্দি অবস্থায় থাকেন। রথ পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। তাই ভক্তরা জগন্নাথ দেবের দর্শন পান না। এই কয়েকদিন পুজোও হয় না তাঁর। শাল বা কম্বল জড়িয়ে বিশ্রাম নেন জগতের নাথ (জগন্নাথ)। ১৫ দিন পর, রথযাত্রার দিন রাজবেশে রথে করে তিনি যাবেন মাসির বাড়িতে। তিথি মেনে এবার রথযাত্রা পালিত হবে আগামী ১ জুলাই (পয়লা জুলাই)।
(ছবি- দেবনাথ মাইতি।)