দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ অক্টোবর: “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর/ ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা/ প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা”। বীরেন্দ্র কণ্ঠে ধ্বনিত এই অনুনকরণীয় আগমনী বার্তা শুনেই বছরের পর বছর ধরে ‘মহালায়া’র অরুণালোক উপলব্ধি করেছে আপামর বাঙালি। ব্যতিক্রম নয় মেদিনীপুরের ঘাটাল, দাসপুর, সবং, পিংলাও। এবারও তার অন্যথা ঘটলো না! তবে, বদলে গেল প্রেক্ষাপট। চারিদিকে প্লাবনের মাঝে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বেশিরভাগ গ্রামের বাসিন্দারা নৌকো অথবা ডিঙিতে বসেই শুনলেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র উচ্চারিত সেই চিরস্মরণীয় মহালয়ার স্তোত্র পাঠ। প্রসঙ্গত, বন্যার দগদগে ক্ষতচিহ্ন এখনও পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, দাসপুর, সবং, পিংলার বিভিন্ন এলাকায়। বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলের তলায়। এদিকে, পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের। সবাই যখন মেতে উঠছেন পুজোর আনন্দে, তখন বানভাসি এলাকায় পুজোর আকাশে মেঘ! পুজোর আনন্দ মাটি। বোধনেই যেন বিষাদের সুর প্লাবিত এলাকায়! বন্যা কবলিত এলাকায় এখনও বহু মানুষ উঁচু বাঁধ বা উঁচু রাস্তার উপর ত্রিপলের তাঁবু টাঙিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। পুজোর আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিনা তা জানেন না! তাঁদের কাছে পুজোর আলাদা আনন্দ বলে কিছু নেই। একাধিক পুজো প্যান্ডেল অর্ধ সমাপ্ত হয়ে জলে ডুবে আছে। মাথায় হাত পুজো উদ্যোক্তাদের। মহালয়ার ভোরে দুর্গত এলাকার চিত্রটা এমনই করুণ!

thebengalpost.net
নৌকায় বসে রেডিও-তে চণ্ডীপাঠ শোনা ঘাটালে : (ছবি- চিত্র সাংবাদিক এস. মণ্ডল)

এসবের মধ্যেই, মহালয়ার ভোর, সবার ইচ্ছে টিভিতে চোখ রেখে মহিষাসুরমর্দিনী দেখার। কিন্তু, এলাকা জলমগ্ন হয়ে থাকার কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। কেবল লাইন বন্ধ। টিভি দেখার উপায় নেই। অগ্যতা, মহালয়ার চণ্ডীপাঠ শোনার জন্য ভরসা সেই মান্ধাতা আমলের রেডিও। ঘাটালের আড়গোড়া এলাকায় নৌকা, ডিঙির উপর বসেই রেডিও টিউনিং করলেন অনুপ সামন্ত, রণজিৎ ঘোষ-রা। বেশ কিছুক্ষণ শোঁ শোঁ, চড়চড়, পড়পড় করার পর বেরিয়ে এলো সেই চেনা স্বর, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়ার চণ্ডীপাঠ! রেডিয়োতে মহালয়ার চণ্ডীপাঠ হচ্ছে শুনে ডিঙি বেয়ে যেতে যেতে নৌকার পাশে ডিঙি লাগিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গেলেন ঘাটালের সিংপুর এলাকার রূপা বাঙ্গাড়ি। মহালয়া শোনার পর গেলেন কাজে। প্রায় একই চিত্রের যেন দেখা মিলল দাসপুর, সবং, পিংলার কয়েকটি অংশেও! নদী নয় তর্পণ করলেন বন্যার জলে, মহালয়া শুনলেন ঘরের বাইরে নৌকো কিংবা ত্রাণ শিবিরে রেডিও কিংবা মোবাইল রেডিও-তে কান লাগিয়ে। ঘাটালের বাসিন্দা অনুপ সামন্ত বলেন, “বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়িতে টিভি দেখার উপায় নেই। রেডিওটা নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। কয়েকজন বন্ধু মিলে মহালয়ার চণ্ডীপাঠ শোনার জন্য। বন্যার যা সর্বনাশ তা তো হয়েইছে। পুজোর আনন্দ শেষ। আজকের দিনে মহালয়ার চণ্ডীপাঠ না শুনলে মনটা কেমন লাগে।”