দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ অক্টোবর: সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁদের দু’জনকে নিয়ে অনেক কানাঘুষোই চলে বিজেপির অন্দরমহলে! বিশেষত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপি’তে দু’জনের দুই ‘লবি’ বা ‘গোষ্ঠী’ নিয়েও কান পাতালেই অনেক কথা শোনা যায়। দু’জনই অবিভক্ত মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’। জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রামের সন্তান দিলীপ বর্তমানে মেদিনীপুর লোকসভার সাংসদ। অন্যদিকে, কাঁথি থেকে মেদিনীপুর, খড়্গপুর থেকে লালগড়, বেলদা থেকে ঝাড়গ্রামে একসময় শাসকদলের (তৃণমূলের) নেতা হিসেবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন শুভেন্দু। অপরদিকে, বিজেপি-তে গিয়েও খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে পরাস্ত করে হয়েছেন বিরোধী দলনেতা। স্বাভাবিকভাবেই, অবিভক্ত মেদিনীপুরের ‘জনপ্রিয় নেতা’র তকমা এখনও তাঁর ঘাড়ে। সমালোচকেরা বলেন, এই ‘জনপ্রিয়তা’ নিয়েই নাকি দু’জনের মধ্যে চাপা রেষারেষির সম্পর্ক! তবে, মহা ষষ্ঠী’র সন্ধ্যায় অন্তত সবকিছুকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বেলদার হসপিটাল রোড সর্বজনীন দুর্গোৎসবের উদ্বোধনে দু’জনকেই দেখা গেল খোশমেজাজে। হাতে হাত রেখে ফিতে কাটা থেকে এক মঞ্চে বসে পরস্পরের বক্তব্য মন দিয়ে শোনা, সবকিছুই করলেন অধুনা বঙ্গ বিজেপি’র দুই প্রধান সেনাপতি।
সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা’য় অনুষ্ঠিত হসপিটাল রোড সর্বজনীন দুর্গোৎসব-এর পুজো উদ্বোধনে পৌঁছন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পুষ্পবৃষ্টি-তে দুই গেরুয়া সেনাপতি’কে বরণ করে নিলেন উদ্যোক্তারা। তারপর, দিলীপ-কে কাছে ডেকে, একসঙ্গে ফিতে কাটলেন শুভেন্দু। মা দুর্গার সামনে দাঁড়িয়ে ছবিও তুললেন। বক্তব্যের শুরুতে দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রীয় সরকার তথা মোদী সরকারের জয়গান গাইলেন। অতিমারীর মোকাবিলা করে, কিভাবে মোদীজির নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে ভারত, তাও বললেন। বাংলায় ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সরকারকে উৎখাত করে শক্তিশালী সরকার গঠনের ডাক দিলেন। অন্যদিকে, ‘যশস্বী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ভারতের এগিয়ে যাওয়া’র বিষয়টি উল্লেখ করে শুভেন্দু বলেন, “এই বিষয়ে আমাদের সর্বভারতীয় নেতা তথা সাংসদ দিলীপ দা বলেছেন, আমি শুধু বলবো বাংলার বুকে তোষণের রাজনীতি নির্মূল করে এক সুস্থ সনাতন সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা।”
শুভেন্দু মনে করিয়ে দিলেন, “আমি চতুর্থীর দিন মেদিনীপুরে একটি ও কলকাতায় একটি পুজো উদ্বোধন করতে গিয়েছিলাম। দু’ জায়গাতেই পুজো উদ্যোক্তারা বললেন, দাদা হাইকোর্টের অর্ডার নিয়ে পূজা করছি!” বলাই বাহুল্য, মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লীতে এই প্রথম এক মাঠে দু’টি পুজোকে কেন্দ্র করে যেভাবে হাইকোর্ট অবধি জল গড়িয়েছিল, সেকথাই উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু। চতুর্থীর দিন শাসকদলের কাউন্সিলরের (চন্দ্রানী দাস) পুজো বিধায়ক জুন মালিয়া উদ্বোধন করেছেন, অন্যদিকে আদি পূজা কমিটি (শরৎপল্লী নাগরিক সমিতি)’র পক্ষ থেকে পুজো উদ্বোধন করানো হয়েছে শুভেন্দু-কে দিয়ে। সেকথাই স্মরণ করিয়ে শুভেন্দু এদিন বেলদার মঞ্চ থেকে বললেন, “এরাজ্যে জয় শ্রীরামকে গালিগালাজ বলা হয়, শিবলিঙ্গকে আক্রমণ করা হয়, মা কালীকে অবমাননা করা হয়! এটা যদি উত্তর প্রদেশে হতো, যত আলকাতরা ছিল, ওদের মুখে লাগিয়ে দিত। বাংলায় হিন্দুদের গায়ের চামড়া গন্ডারের থেকেও বেশি মোটা হয়ে গেছে! সেজন্যই পিতৃপক্ষে একজন কাঁচি হাতে নিয়ে ঘোরেন পুজো উদ্বোধনের জন্য। উনি ভুলভাল সরস্বতী মন্ত্র, চন্ডীপাঠ করেন। ক্ষমতা থাকলে বাইবেল, কোরাণের দু’লাইন ভুল বলে দেখান! সময় এসেছে বাংলার হিন্দুদের জাগরিত হওয়ার। সুস্থ সনাতন সংস্কৃতি গড়ে তোলার।” বরাবরের মতোই এদিনও শুভেন্দু গীতা-কে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছেন। তাঁর মতে, “গীতা শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। গীতা হলো বিজ্ঞান!”