thebengalpost.net
মা (বাম দিকে) ও দিদির সঙ্গে সাকলাইন :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ মে: বাবা ডাক ভালো করে শেখার আগেই নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে বাবাকে হারাতে হয়েছে! অদম্য লড়াই করে ছেলেকে মানুষ করেছেন মা। ছেলে যাতে মানুষের মতো মানুষ হয়, সেজন্য তাকে ভর্তি করেছিলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। মা-কে হেরে যেতে দেয়নি শহর মেদিনীপুরের সাকলাইন! উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় ‘অষ্টম’ স্থান অধিকার করে মায়ের সব স্বপ্ন, আশা পূরণ করলো ছেলে। প্রসঙ্গত, এবার (২০২৩) উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ৯ জন পড়ুয়া জায়গা করে নিয়েছে। সেই তালিকায় অন্যতম নাম- সৈয়দ সাকলাইন কবীর (Syed Saklain Kabir)। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪৮৯ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় অষ্টম স্থান অধিকার করেছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই কৃতী তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের (হবিবপুরের) ‘গর্ব’ সাকলাইন।

thebengalpost.net
DI সৈয়দ মোমিনুর রহমানের সঙ্গে সাকলাইন :

উল্লেখ্য যে, বাবা সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবীর পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর মা জেলা পুলিশ অফিসে ক্লার্কের চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। মায়ের অদম্য জেদ ও সাকলাইনের হার না মানা লড়াইয়ে এসেছে সাফল্য। ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় রাজ্যে যুগ্ম অষ্টম স্থান অধিকার করেছে সাকলাইন। মেদিনীপুর শহরের হবিবপুর এলাকার বাসিন্দা সাকলাইনের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯। যদিও, সাকলাইন পড়াশোনা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের অধীন রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুরে। স্বামী মারা যাওয়ার পর সাকলাইনের মা চাঁদ ফিরোজা একাকী লড়াই করেছেন এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে। মেয়ে বর্তমানে কলেজে পড়ে। অনেক কষ্ট করে মেধাবী ছেলেকে শৈশবেই ভর্তি করে দিয়েছিলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ে। অতিমারীর কারণে, ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে হয়নি সাকলাইন-দের। সেই হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিক-ই তাদের প্রথম বড় পরীক্ষা! আর, তাতে সফল সাকলাইন।

বুধবার বিকেলেই মেদিনীপুর শহরের বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা পত্র সহ সংবর্ধনা জানিয়ে এসেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সৈয়দ মোমিনুর রহমান। তিনি জানান, “সাকলাইনের মতো ছেলেরাই তো আমাদের রাজ্যের গর্ব!” মা চাঁদ ফিরোজা বলেন, “মাধ্যমিক দিতে পারেনি বলে একটা দুঃখ ছিল। অনেক প্রার্থনা করতাম ছেলের যেন ভালো ফলাফল হয়। ঈশ্বর অবশেষে আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। মনের মত ফলাফল পেয়েছি।” পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেট সহ বিভিন্ন খেলাধুলাতেও দক্ষ সাকলাইন। নরেন্দ্রপুরে হস্টেলে থাকাকালীন যথেষ্ট খেলাধুলা করেছে সে। বুধবার সাকলাইন বলে, “ফলাফল ভালো করার লক্ষ্যে ছিলাম। তবে, নরেন্দ্রপুরে থাকাকালীন চার থেকে পাঁচ ঘন্টার বেশি পড়তে পারতাম না! আলাদা করে টিউশনের কোন বিষয় ছিল না সেখানে। টেস্ট পরীক্ষার পর বাড়িতে এসে বিজ্ঞান বিভাগে কয়েকটা টিউশন নিয়েছিলাম। সাত থেকে আট ঘন্টা বাড়িতে পড়াশোনা করতাম। ফলাফল ভালো হবে জানতাম, এতোখানি ভালো হবে সেটা জানতাম না! ভবিষ্যতে লক্ষ্য রয়েছে চিকিৎসক হওয়ার।”

thebengalpost.net
মা (বাম দিকে) ও দিদির সঙ্গে সাকলাইন :