দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, বাঁকুড়া, ১৯ জানুয়ারি: “ব্যর্থতাই হল সাফল্যের চাবিকাঠি (failure is the pillar of success)। ভেঙে পড়ার কিছু নেই! চেষ্টা চালিয়ে যাও, সাফল্য আসবেই।” প্রতিবার সাফল্যের দোরগোড়া থেকে ফিরে আসা ছেলেকে বার বার এই কথাটাই বলে এসেছেন পেশায় অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক অলোক করণ। অবশেষে ষষ্ঠ বারের চেষ্টায় ‘স্বপ্ন’ পূরণ করেছে ছেলে। লক্ষ্য-ভেদ করেছেন জঙ্গলমহলের পার্থ! দেশের সবথেকে কঠিন এবং উচ্চ পদমর্যাদা প্রাপ্তির পরীক্ষা রূপে বিবেচিত ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (UPSC) জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পরীক্ষায় (Geological Survey of India Examination) সারা দেশের মধ্যে সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন জঙ্গলমহল বাঁকুড়ার বছর ৩০’র যুবক পার্থ করণ। আর এই খবরে স্বভাবতই খুশির হাওয়া জঙ্গলমহল জুড়ে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশ জুড়ে সাড়া ফেলেছে বিধু বিনোদ চোপড়ার ছবি ‘টুয়েলভথ ফেল।’ জঙ্গলমহল বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামের ছেলের ‘লক্ষ্যভেদের গল্প’ যেন ‘টুয়েলভথ ফেল’-র গল্পকেও হার মানায়! একাগ্রতা, জেদ আর ‘লক্ষ্য স্থির রাখা’ লড়াইয়ের উপর ভর করে বাঁকুড়ার সারেঙ্গার পার্থ করণ তাঁর স্বপ্ন পূরণ করলেন। জানা যায়, ছেলের পড়াশোনার তাগিদে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত মাড়োশোল গ্রাম থেকে তুলনায় উন্নত সারেঙ্গা এলাকায় চলে এসেছিলেন অলোক বাবু। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা করণ একজন গৃহবধূ। তবে, ছেলে পার্থ শৈশব থেকেই মেধাবী। সারেঙ্গা মাহাত্মাজী স্মৃতি বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতক হন। এরপর, আইআইটি জ্যাম পরীক্ষা দিয়ে আইআইটি গুয়াহাটি (IIT Guwahati) থেকে স্নাতকোত্তর করে পিএইচডি (Phd) করার জন্য পাড়ি দেন দিল্লি।
দিল্লিতে গিয়েই পাল্টে যায় পার্থ-র জীবনের লক্ষ্য। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছনোর লক্ষ্যে ইউপিএসসি (UPSC) ক্র্যাক করার জেদ মনে চেপে বসে। পরপর চার বছর আইএএস (IAS), আইপিএস (IPS) হওয়ার চেষ্টা ব্যার্থ হয়। হাল ছাড়েননি পার্থ! এরপর, বিষয় পরিবর্তন করে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইণ্ডিয়ার পরীক্ষার জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সেখানে প্রথমবার সাক্ষাৎকার পর্ব (Interview) পর্যন্ত পৌঁছেও সাফল্য আসেনি। দমে না গিয়ে লড়াই চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ইউপিএসসি ২০২৩ (UPSC 2023)-তে সাফল্য ধরা দেয়। ওই পরীক্ষাতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সপ্তম স্থান অধিকার করেন পার্থ। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পার্থ বলেন, “লক্ষ্যটা স্থির রেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমার বাবা বারবার এই উপদেশটাই দিয়েছেন।” পার্থ এও বলেন, “জঙ্গলমহলের যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা এই কঠিন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে চায়, আপাতত তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।”