দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ ফেব্রুয়ারি: তরুণ চিকিৎসক ডাঃ আশাদুল আলি খাঁনের তৎপরতায় শেষমেশ হাসপাতালের বেডেই মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিলো পশ্চিম মেদিনীপুরের গুগগুড়িপাল হাই স্কুলের ছাত্রী চাঁদমণি বাস্কে। প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল হাই স্কুলে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী চাঁদমণি। এদিকে, গুড়গুড়িপাল স্কুলের মাধ্যমিকের সেন্টার মেদিনীপুর সদর ব্লকেরই চাঁদড়া হাই স্কুলে। তবে, নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে পারেনি চাঁদমনি। বরং তাকে পরীক্ষা দিতে হল সদর ব্লকের দেপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালের বেডে বসে!

thebengalpost.net
চাঁদমণি বাস্কে:

উল্লেখ্য যে, পরীক্ষার দিনকয়েক আগে ঝাড়গ্রাম জেলার সিমলি গ্রামে নিজের বাড়িতে গিয়েছিল চাঁদমণি। সেখানে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) অসুস্থ হয়ে পড়ে চাঁদমণি। পেট খারাপ জনিত সমস্যা নিয়ে বুধবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়গ্রাম ব্লকে অবস্থিত মোহনপুর হাসপাতালে ভর্তি হয় চাঁদমণি। বৃহস্পতিবার সকালের রাউন্ডে রোগী দেখতে এসে কর্তব্যরত তরুণ চিকিৎসক আশাদুল আলি খাঁন জানতে পারেন চাঁদমণি এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং সে যেভাবেই হোক পরীক্ষায় বসতে চায়। চিকিৎসক আশাদুল তৎক্ষণাৎ ফোনে যোগাযোগ করেন তাঁর মাধ্যমিক স্কুল চুয়াডাঙ্গা হাই স্কুলের শিক্ষক তথা মেদিনীপুরের সুপরিচিত সমাজকর্মী সুদীপ কুমার খাঁড়া’র সাথে। সুদীপ বাবু তাঁর ছাত্রকে পরামর্শ দেন রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী যদি সম্ভব হয় রোগীকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা পরীক্ষাকেন্দ্র চাঁদড়া হাই স্কুলের নিকটবর্তী দেপাড়া হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি সুদীপ বাবু সকালেই চাঁদমণির অসুস্থতা এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার বিষয়টি গুড়গুড়িপাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম ভৌমিক এবং সহ শিক্ষক পল্লব সরকারকে জানিয়ে দেন। খবর পেয়ে উদ্যোগী হন গৌতম বাবু ও পল্লব বাবু।

প্রধান শিক্ষক লিখিত ভাবে চাঁদড়া হাই স্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রের সেন্টারের ইনচার্জকে জানান। পাশাপাশি জানানো হয় সদর ব্লকের বিএমওএইচ-কে। ইতিমধ্যে, নিজের ডিউটি আওয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার পরে, আরও ঘন্টাখানেক হাসপাতালে থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী চাঁদমণিকে দেপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছানোর সবরকম ব্যবস্থা করে হাসপাতাল ছাড়েন দায়িত্বশীল চিকিৎসক ডাঃ আশাদুল আলি খাঁন। চাঁদমণিকে নিয়ে দুপুরের মধ্যে দেপাড়া হাসপাতালে পৌঁছে যান পরিবার-পরিজনেরা।চাঁদমণিকে দেপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাশাপাশি সুদীপ বাবু চাঁদমণির বিষয়টি জেলা প্রশাসনের হেল্প লাইনেও ফোন করে অবগত করেন। শুক্রবার হাসপাতালের বেডে বসেই বাংলা পরীক্ষা দিলো চাঁদমণি। শুক্রবার মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রামে জেলায় ডিউটিতে যাওয়া-আসার পথে দেপাড়া হাসপাতালে ঢুকে চাঁদমণির স্বাস্থ্য ও পরীক্ষা বিষয়ে খোঁজ নেন চিকিৎসক ডাঃ আশাদুল আলি খাঁন। পরীক্ষার আগে চাঁদমণি দুর্বলতা অনুভব করায় চাঁদমণির জন্য ‘রাইটার’ এর ব্যবস্থা করতেও উদ্যোগী হয়েছিলেন গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম ভৌমিক, শিক্ষক পল্লব সরকার, গৌরশংকর সাহুরা। শুক্রবার পরীক্ষা শেষে চাঁদমণি জানায় তার পরীক্ষা মোটের উপর ভালো হয়েছে। চিকিৎসক ডাঃ আশাদুল আলি খাঁন সহ এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। শিক্ষক সুদীপ বাবু তাঁর ছাত্রের কর্তব্যবোধকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, তিনি তাঁর ছাত্রের জন্য গর্বিত।

thebengalpost.net
ডাঃ আশাদুল খাঁন: