মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ মার্চ:অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই প্রথম পাঁচটি পরীক্ষা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণের ভালকিশোল গ্রামের গৃহবধূ অমৃতা মাহাত। সাহেবপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী অমৃতার পরীক্ষা কেন্দ্র হিজলি সংলগ্ন গোপালী উচ্চ বিদ্যালয়। এদিকে, গতকাল অর্থাৎ রবিবার রাতে প্রসব বেদনা অনুভব করায় তাকে ভর্তি করা হয় হিজলী গ্রামীণ হাসপাতালে। ভোর ৩ টা নাগাদ কোল আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। এদিকে, আজ (সোমবার) ছিল গণিত পরীক্ষা। আগামীকাল পদার্থ বিজ্ঞান হলেই মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। তাই, এতদূর পর্যন্ত এগিয়ে এসে, শেষ দুটি পরীক্ষা না দিলে একটা বছর নষ্ট হয়ে যেত অমৃতার! এই পরিস্থিতিতে, নিজের মানসিক শক্তি, স্বামী সহ পরিবার পরিজনদের উৎসাহ এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের সেন্টার ইন চার্জ সহ শিক্ষকদের ও খড়্গপুর গ্রামীণ থানার সহযোগিতায় হাসপাতালে বসেই পরীক্ষা গণিত পরীক্ষা দিল অমৃতা। পাশে তখন শুয়ে তাঁর সদ্যজাত কন্যাসন্তান!

thebengalpost.net
মাধ্যমিক দিচ্ছে অমৃতা মাহাত:

উল্লেখ্য যে, হাসপাতালের বিছানায় বসে পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও এবার অনেক ছাত্র-ছাত্রী-ই অসুস্থ হয়ে হাসপাতলে বসেই পরীক্ষা দিয়েছে বা দিচ্ছে। কিন্তু, সদ্যজাত সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রথম জেলার কোন ‘কন্যাশ্রী’ পরীক্ষা দিল। অমৃতার স্বামী সুখদেব মাহাতো জানিয়েছেন, “গতবছর এরকম সময়ই আমাদের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। গতকাল রাতে প্রসব যন্ত্রণা ওঠায়, হাসপাতালে ভর্তি করি। আমাদের মেয়ে হয়েছে। খুব খুশি। আরও খুশি, ও ঠিকঠাক ভাবেই পরীক্ষা দিতে পেরেছে বলে। এজন্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ,‌ পুলিশ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের ধন্যবাদ জানাই। আমার মেয়ে ও স্ত্রী দু’জনই ভালো আছে। আগামীকাল ভৌত বিজ্ঞান পরীক্ষা হলেই পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে।” পরীক্ষা দিতে পারায় খুশি অমৃতা নিজেও। তবে, মাত্র ১৬-১৭ বছর বয়সে বিবাহ আর অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ কেন? সেই প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর দিতে পারেননি কেউই! লাজুক হেসে সুখদেব অবশ্য জানিয়েছে, “দেখতে গিয়ে পছন্দ হয়ে যায়। দুই বাড়ির মতে তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে ফেলি!”