দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জুলাই:”ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা/ ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ…!” পরিবেশ বাঁচাতে সবুজের চাষ ছাড়া উপায় নেই। সবুজায়নের মাধ্যমেই এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে। আর, এই ‘সবুজের অভিযানে’ সবুজ-সজীব পড়ুয়াদের বিকল্প নেই, তা আবারও প্রমাণ করলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের (গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত) গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অরণ্য সপ্তাহের (১৪-২০ জুলাই) প্রথম দিন-ই বিদ্যালয়ের ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক ব্রজদু্লাল গিরির নেতৃত্বে গুড়গুড়িপালের জঙ্গলজুড়ে ছড়ানো হল, ২ কুইন্টাল ফলের বীজ। উদ্দেশ্য দু’টি, খাদ্যের অভাবে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে চলে আসা হাতিকে জঙ্গলেই রুখে দেওয়া এবং ক্রমশ ফাঁকা হয়ে জঙ্গলকে সবুজে সবুজে ভরিয়ে তোলা। বিদ্যালয়ের কচিকাঁচাদের এই ধরনের সবুজের অভিযানে উৎসাহিত করার বিষয়টি অবশ্য সুপরিকল্পিত ভাবে সম্পন্ন করেছেন শিক্ষক ব্রজদুলাল বাবু। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম ভৌমিক, ভূগোলের অপর শিক্ষক লাল্টু জানা সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই উদ্যোগেরই প্রতিধ্বনি যেন শোনা গেল রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা’র মুখে!

thebengalpost.net
বীজ ছড়াল কচিকাঁচারা :

শুক্রবার (১৫ জুলাই) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বনমহোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা উপলক্ষে শালবনীর ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে, রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রী বললেন, “শিক্ষকরাই মানুষ গড়েন। আপনাদের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। একই সঙ্গে আপনাদের কাছে আমার আবেদন, পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের গাছ লাগানোতে উৎসাহিত করুন। তাছাড়া ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা এই পৃথিবীকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।” জেলাস্তরীয় এই বনমহোৎসবের অনুষ্ঠানে বন প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, জেলাশাসক আয়েশা রানী এ, বিধায়ক ও সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরা, জেলা পরিষদের বন ও বনভূমি কর্মাধ্যক্ষ নেপাল সিংহ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী, মেদিনীপুর বনবিভাগের ডিএফও সন্দীপ বেরোয়াল সহ বনদপ্তরের আধিকারিক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ। বিশ্ব উষ্ণায়নের করাল গ্রাস থেকে এই সভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে যে সবুজায়নের বিকল্প নেই, সেই বার্তাই দিয়েছেন উপস্থিত আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা।

thebengalpost.net
বনমহোৎসবের সূচনা:

এদিকে, গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের এই অনন্য প্রচেষ্টা সম্পর্কে শিক্ষক ব্রজদুলাল গিরি জানিয়েছেন, “প্রতি বছর জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম গুলোতে হাতির হানা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এর প্রধান কারণ, জঙ্গলের পরিমাণ হ্রাস হয়ে যাওয়া। ফলে, জঙ্গলে হাতির প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে। এজন্যই, লোকালয়ে এসে ঘরবাড়ি, চাষের জমির ক্ষতি করছে দলমার দামালরা। সেজন্যই, গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের বলা হয়, এই ছুটিতে বাড়িতে যে আম, কাঁঠাল আসবে তার বীজ সংগ্রহ করে রাখতে। স্কুল খুলতেই ছাত্র ছাত্রীরা সকলে বীজ নিয়ে আসে। দেখা যায়, আমাদের সংগ্রহে প্রায় ২ ক্যূইন্টাল বীজ। বৃহস্পতিবার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে স্কুল লাগোয়া জঙ্গলে সেই বীজ ছড়ানো হয়। এই কাজে সারাক্ষণ পাশে থেকে সাহযোগিতা করে গেছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম ভৌমিক এবং স্কুলের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক লাল্টু জানা প্রমুখ। এছাড়াও, গুড়গুড়িপাল বনাঞ্চলের কর্মীদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। যেভাবে তাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সত্যি ভোলার নয়” শুক্রবার-ও জেলার বনমহোৎসবের অনুষ্ঠানের জন্য জঙ্গলমহলের একটি বিদ্যালয়কে বেছে নিয়ে বনদপ্তর যেন এই বার্তাই দিলেন, সবুজ পৃথিবীকে পুনরায় সজীব-সতেজ করে তুলতে চিরসবুজ কচিকাঁচারাই এই সমাজের ভরসা!

thebengalpost.net
শালবনীর স্কুলে বৃক্ষরোপণে জেলাশাসক আয়েশা রানী: