তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ মার্চ: তাঁর নাম ‘অদ্ভুত’ নাকি ‘অদ্যুত’ প্রথমে এটা নিয়েই সংশয় ছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের! পরে অবশ্য নিশ্চিত করা হয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার খড়ার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের নাম- অদ্যুত মন্ডল। তবে, যে পদ্ধতিতে তিনি মাত্র ২৪ ঘন্টার জন্য খড়ার পৌরসভার ‘চেয়ারম্যান’ হলেন এবং পদত্যাগপত্র জমা দিলেন তাতে অবশ্য ‌সবটা ‘অদ্ভুত’ই ঠেকছে! পেশায় অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকের এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। তবে, দল তাঁকে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান করেনি! ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, চেয়ারম্যান হচ্ছেন সন্যাসী দোলই এবং ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন পূর্বা ভুঁইয়া। এরপর, রাতেই তৈরি হয় বিক্ষোভের ‘ব্লু-প্রিন্ট’! ১৬ মার্চ (বুধবার) বোর্ড গঠনের সকাল থেকে তুমুল বিক্ষোভে শপথ গ্রহণ আটকে যায়। শেষমেশ, ভোটাভুটিতে দলের ৩ জন (নিজেকে নিয়ে ৪) এবং বিজেপি’র ২ জন কাউন্সিলরের ভোট পেয়ে ৬-৪ ব্যবধানে সন্যাসী দোলই-কে পরাজিত করে তিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আর, বুধবার সন্ধ্যাতেই তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে বহিষ্কার করে! দলের মনোনীত চেয়ারম্যান-কে এভাবে হেনস্থা ও অপমান করার দায়েই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরই, বৃহস্পতিবার দুপুরে চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন অদ্যুৎ মন্ডল! খড়ার পৌরসভার ২৪ ঘন্টার ‘অদ্ভুত’ চেয়ারম্যান অদ্যুৎ অবশ্য সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলের বিরুদ্ধে।

thebengalpost.net
অদ্যুত মন্ডল :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খড়ার পৌরসভার ১০-টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮-টি তৃণমূলের দখলে থাকলেও, ২-টি গিয়েছিল বিজেপির দখলে। সেই দুই কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন অদ্যুত। দল তা বরদাস্ত করেনি! তবে, অদ্যুতের বক্তব্য ছিল, “একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী গজিয়ে উঠেছিল। তাই এত বিক্ষোভ। দল সবকিছু খতিয়ে দেখুক।” এটা অনস্বীকার্য যে, সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের একটি অংশ। আর সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে অদ্যুত-কে সমর্থন জানিয়ে দুই বিজেপি কাউন্সিলরের বক্তব্য ছিল, “সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য অদ্যুত বাবুর তৈরি প্ল্যাটফর্মকে সমর্থন জানিয়েছি। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী সবকিছু আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেছিল, তাতে খড়ারবাসীর উন্নয়ন ব্যাহত হত।” এরপরই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অদ্যুত-কে বহিষ্কার করা হয়। আর, অদ্যুত-কে সমর্থন জানানো তৃণমূলের অন্য ৩ কাউন্সিলর-ও বুঝতে পারেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও নেমে আসতে চলেছে শাস্তির বিধান! এরপরই, সব ওলটপালট হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাসের কাছে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন অদ্যুত মন্ডল। অন্যদিকে, তৃণমূলের বাকি ৭ কাউন্সিলরও জানিয়ে দেন, “আমরা ঐক্যবদ্ধ।” ৩ কাউন্সিলর বলেন, “আমরা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছিলাম।” আর, অদ্যুত বলেন, “দলকে শিক্ষা দিতেই এমন রূঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।” মহকুমা শাসক জানিয়েছেন, “দ্রুত পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।” আগামী এক-দু’সপ্তাহের মধ্যেই সবটা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে, নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন তৃণমূল কাউন্সিলররা! সেক্ষেত্রে ফের সন্যাসী-কেই চেয়ারম্যান করা হয়, নাকি অন্য কাউকে সেদিকেই তাকিয়ে খড়ারবাসী।